তরমুজে ভালো দাম পাচ্ছেন ভোলার চাষীরা

১৭ এপ্রিল ২০২২

কামরুজ্জামান শাহীন,ভোলা:

ভোলায় এবার মৌসুমি ফল তরমুজের ভালো দাম ভালো পাচ্ছেন চাষীরা। এতে বেজায় খুশি তারা। জেলায় এ বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে তরমুজ। গত বছর দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে লোকসান হলেও এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হওয়ায় সে লোকসান কাটিয়ে ওঠতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন চাষীরা।

জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলার খেতে খেতে এখন তরমুজ বেচা কেনার ধুম পড়েছে। বেপারীরা মাঠ থেকেই তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ভোলার তরমুজ চলে যাচ্ছে বরিশাল, চাঁদপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। তবে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তরমুজ বিক্রিতে আশানুরূপ দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক চাষীরা।

ভোলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলার ৭ উপজেলায় তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫ হাজার ৬১৮ হেক্টর। বিপরীতে আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ২৪৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৮ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার হেক্টর। দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৬১৮ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন তরমুজ।

জেলার ৯০ ভাগ তরমুজ উৎপাদন হয় চরফ্যাশন উপজেলায়। এ উপজেলায় তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৮৫০ হেক্টর ধরা হলেও চাষাবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে। সেখানকার ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে নুরাবাদ, নীলকমল, মুজিবনগর, চরকলমী, আহম্মদপুর, আবুবক্করপুর, এওয়াজপুর ও রসুলপুরসহ নয়টি ইউনিয়নে বেশি তরমুজের আবাদ হয়েছে। প্রতিটি খেতেই তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। এ উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের তরমুজ চাষী আমজাদ হোসেন মাঝী বলেন, ৫১ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এতে আমার ৪৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত এক (১) কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। আরো ২০ লাখ টাকার তরমুজ খেতে রয়েছে। এতে খরচ বাদ দিয়ে মোটের ওপর ৭২ লাখ টাকা লাভ করতে পেরেছি। পরিবহন খরচ কিছুটা কম হলে আরো বেশি মুনাফা করা যেত। নুরাবাদ ইউনিয়নের তরমুজ চাষী সায়েদ মাঝী জানান, ৪০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এতে প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে তার। এখন পযর্ন্ত ৭০ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। খেতে এখনো ১০ লাখ টাকার তরমুজ রয়েছে। খচর বাদ দিয়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকার মতো লাভ করেছেন তিনি।

তরমুজ ক্রয় করতে আসা চাঁদপুরের পাইকারি ব্যবসায়ী গাজী আলম জানান, তারা চাষীদের কাছ থেকে পুরো খেতের তরমুজ ক্রয় করেন। সে তরমুজ ট্রলার বা ট্রাকযোগে বিভিন্ন জেলায় আড়তে নিয়ে বিক্রি করেন। এতে করে ১০-১২ কেজি ওজনের একটি তরমুজের মূল্য নির্ধারিত হয় ২৫০-৩০০ টাকা। মোকামে ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়। তিনি জানান, চরফ্যাশন থেকে ২৫ শ’ তরমুজ চাঁদপুর নিতে ট্রাক ভাড়া গুনতে হয় ৪৫-৫০ হাজার টাকা। ফেরিতে আসা-যাওয়ার পথেও ৭-৮ হাজার টাকা চাঁদা গুনতে হয়। এতে মাঠ পর্যায়ের সবচেয়ে বড় আকৃতির তরমুজ ৩০০ টাকায় ক্রয় করে মোকামে বিক্রি করতে হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়। তাছাড়া রমজান উপলক্ষ্যে বাজারে দাম অনেক বেড়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর বলেন, এবছর তরমুজের ফলন হয়েছে প্রচুর। প্রতি হেক্টরে গড়ে ফলন হয়েছে ৫২ টন। চাষীরা বাজার দামও পাচ্ছে ভালো। তিনি জানান, ভোলা থেকে দেশের অন্য জেলায় সড়ক পথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলে পরিবহন খরচ আরো কমে হতো। এতে তরমুজ চাষীরা আরো বেশি লাভের মুখ দেখতেন।

এমকে

 


মন্তব্য
জেলার খবর