কয়েকদিন ধরেই দেশে ভোজ্যতেল সয়াবিনের বাজারে নৈরাজ্য চলছে। একদিকে সঙ্কটের কথা বলা হচ্ছে। অন্যদিকে বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা দরে একদিনের ব্যবধানে কেজিতে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলে দাম বেড়েছে ২০ টাকা। চাহিদা মতো মিলছে না বোতলজাত সয়াবিনও। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইন্দোনেশিয়া তার দেশের পাম অয়েলের কাঁচামাল রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবরে সূচনা হয় এ নৈরাজ্যের। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর মাঠে নেমেছে। কিন্তু তাতে তেমন কোনো ফল না পাওয়ায় সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এর আগেও কয়েক দফায় লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছিল সয়াবিন তেলের দাম। কিন্তু সরকারের হস্তক্ষেপে কিছুটা সহনীয় মাত্রায় এসছিল সে দাম।
অভিযোগ রয়েছে, অধিক মুনাফার আশায় পাইকারি কিছু ব্যবসায়ী শ’ শ’ কার্টন সয়াবিন তেল মজুত করেছে। তারাই বলছে, বাজারে তেল নেই, কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। এসব কারণ দেখিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অনেকে সুযোগ কাজে লাগাতে সয়াবিন বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
রাজধানী ঢাকার সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার কাওরান বাজারের পাইকারি কিছু ব্যবসায়ী সয়াবিন অবৈধ মজুত করে ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে- এমন অভিযোগে সেখানে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। রোববার (৩০ এপ্রিল) অভিযান চলাকালে কয়েকটি দোকান থেকে দুই হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়।
অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খালি ড্রামের আড়ালে শ শ কার্টন সয়াবিন তেল মজুত রেখেছিলেন কিছু ব্যবসায়ী। নিজেদের দোষ স্বীকার করায় তাদের দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকেও জরিমানা করা হয়। তাদের এ অভিযান চলমান থাকবে। কর্মকর্তারা আরও জানান, অভিযানকালে অনেক দোকানিই পণ্যের মূল্য তালিকা দেখাতে পারেনি, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যেরও বেশি দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করছিলেন। তাছাড়া ক্রেতাদেরও তেল দেওয়া হচ্ছিল না। তাদের মালামাল সংক্রান্ত স্টক রেজিস্টারও পাওয়া যায়নি।
বাজার বিশ্লেষকরা জানায়, ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম পাম অয়েল উৎপাদনকারী দেশ। তাই তাদের নিষেধাজ্ঞা গোটা বিশ্বের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পাম অয়েলের দামের সঙ্গে সয়াবিন তেলেরও সম্পর্ক রয়েছে। আর ভোজ্যতেলের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দামও বাড়বে বলে মনে করেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ভোজ্যতেল বিক্রি কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শ দেন তারা।
বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ার এ নিষেধাজ্ঞা শুধু বাংলাদেশ না, সারা বিশ্বেই প্রভাব পড়বে। এ নিষেধাজ্ঞার কারণে সব ধরণের ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে। সরকারের উচিত হবে- পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভর্তুকির ব্যবস্থা করা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ ঠিকই আছে। কিন্তু পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা দুষ্টুমি শুরু করেছে। শ’ শ’ লিটার সয়াবিন ও পাম তেল মজুত করে রেখেছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর থেকে বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, অবৈধ মজুত তেল জব্দ ও জড়িতদের জরিমানা করা হচ্ছে।
এমকে