বজ্রাঘাত ঠেকানোর উদ্যোগ নেই

০৫ মে ২০২২

গত ঈদুল ফিতরের দিনে দেশের তিন জেলায় বজ্রাঘাতে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ২২ এপ্রিল পর্যন্ত চলতি বছরে মারা গেছেন ২৪ জন। এ রকম প্রতি বছরই বজ্রাঘাতে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু এ মৃত্যু ও বজ্রাঘাত ঠেকাতে তেমন কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। অথচ  ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, কালবৈশাখী, বজ্রপাতের স্থানভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিষয়সহ বজ্রপাতকালে করণীয় এবং বর্জনীয় সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা গেলে বজ্রাঘাতে আক্রান্তের সংখ্যা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষকরা। বজ্রাঘাত ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে এ রকম নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দেশে কয়েক বছর ধরে বজ্রাঘাতে মৃতের সংখ্যা নথিভুক্ত করেছে ডিজাস্টার ফোরাম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের তথ্যমতে, ২০২১ সালে ২৪৮ পুরুষ ও ৭২ শিশুসহ ৩৬২ জন এ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন । তার আগের বছর মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৮০ জন। এর মধ্যে ২৭১ জন পুরুষ  ও ৮০ জন শিশু  ছিল। চলতি বছরে মারা যাওয়াদের মধ্যে চার জন শিশু, ৫ জন নারী এবং ১৫ জন পুরুষ আছে। মারা যাওয়াদের মধ্যে কৃষকের সংখ্যাই বেশি। তালিকায় এরপর আছে জেলে এবং ছাদে-মাঠে খেলারত শিশু। দেশে বজ্রাঘাত শুরু হয় মার্চে, শেষ হয় আগস্টে গিয়ে। এর মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।

ঈদের দিনে মারা যাওয়া ৫ জনের মধ্যে একজন ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। বাকিদের মধ্যে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে স্কুলছাত্রসহ তিনজন ও হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জে দু’জন ছিল।  

গবেষকরা বলছেন, মূলত ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বজ্রপাত বেশি হয়। দেশের একদিকে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর রয়েছে। অন্যদিকে উত্তরে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা। মহাসাগর  থেকে গরম আর আর্দ্র বাতাস এবং পাহাড়ি এলাকা থেকে ঠান্ডা বাতাস আসে। এ দুইয়ের কারণে বজ্রপাত বেশি। আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্যানুযায়ী, দেশে বজ্রপাতের হটস্পট হচ্ছে মধ্যাঞ্চল।

গবেষকরা জানান, বজ্রপাতের ধর্ম হচ্ছে মাটিতে পড়ার আগে সবচেয়ে উঁচু জায়গায় আঘাত হানা। হাওর এলাকায় ও  গ্রামের ফসলি মাঠে গাছপালা কম, তাই সরাসরি কৃষকের শরীরে পড়ে। এ কারণে হাওর এলাকায় ও গ্রামে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যু ঠেকানো যায় না। শহরে বজ্রপাত প্রতিরোধে বেশিরভাগ ভবনে প্রতিরোধক দণ্ড থাকে। এ কারণে মৃত্যুও কম। পক্ষান্তরে গ্রামে সে ব্যবস্থা না থাকায় মৃত্যু বেশি।

বজ্রাঘাত প্রতিরোধে বজ্রপাতের হটস্পটগুলো আরও পর্যালোচনা করে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। তাছাড়া এখন আবহাওয়া বিষয়ক অনলাইন সফটওয়্যারের মাধ্যমে  এলাকায় ও সময় ভিত্তিক  সম্ভাব্য বজ্রপাত সম্পর্কে সহজেই জানা যায়। আবহাওয়ার গাণিতিক মডেল, কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ, রাডার ও মোবাইল সেবার মাধ্যমেও বজ্রাঘাতে প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতি কমানো যায়। কেবল মৃত্যু ঠেকানো নয়, বজ্রাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার পরে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়াদের চিকিৎসার বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন গবেষকরা।

এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর