ফরহাদ খান, নড়াইল:
৩১৫ জনের কারো মাথায় টোপা, কারো গামছা বাঁধা, কারো আবার হাতে কাস্তে। বয়স তাদের ১৫’র নিচে, সবাই স্কুল শিক্ষার্থী। স্কুল বন্ধ থাকায় দল বেঁধে দিনদিন ধরে তারা কেটে দিয়েছে শ্রমিক সঙ্কটে ভোগা কৃষকের ধান। ধানকাটা উৎসব নামে এমন ব্যতিক্রমী ও মানবিক উদ্যোগ নিয়েছিল নড়াইলের গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রোববার (১৫ মে) দুপুরে তাদের এ উৎসব শেষ হয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার (১৩ মে) সকাল ৮টা থেকে মাঠে নেমে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শুধু ধান কাটাই নয়, বাড়িতেও পৌঁছে দিয়েছেন সোনালি ফসল। তিনদিনে সব মিলে প্রায় ১৫ বিঘা জমির ধান ক্ষেত থেকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন তারা। এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগে দারুণ খুশি এলাকার কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।
গুয়াখোলা গ্রামের প্রতাপ কুমার পাল জানান, বর্তমানে ধান কাটা শ্রমিক চাহিদা মতো পাওয়া যাচ্ছে না। তিনবেলা খাবারসহ জনপ্রতি শ্রমিকের মূল্য গুণতে হচ্ছে এক হাজার টাকা। গুয়াখোলা স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা মিলে আমার ৬০ শতক জমি ধান প্রায় ১০ মিনিটে কেটে দিয়েছেন। এ সঙ্কটে তাদের পাশে পেয়ে আমি ভীষণ খুশি। অপূর্ব সরকার, হাসিদা রানী, মহাদেব সরকারসহ এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ বলেন, স্কুলের ছেলে-মেয়েরা যে উদ্যোগ নিয়ে আমাদের ধান কেটে দিচ্ছে, তাতে আমরা মহাখুশি। অনেক উপকার হচ্ছে।
সোমা ও স্বর্ণালি বিশ্বাসসহ বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে কৃষকদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ফসল দ্রুত ঘরে তুলতে আমরা কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছি। শিক্ষক তাপস পাঠক ও স্বপন কুমার সেন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ জমিতে পানি জমে গেছে। ধানে অঙ্কুরোদগম হয়ে যাচ্ছে। এ সংকটময় মুহূর্তে আমরা এলাকার কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, শ্রমিক সংকট ও তিন থেকে চারদিনের বৃষ্টি- পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, এলাকার গরিব কৃষকদের ধান কেটে দিবো। কারণ বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা হওয়ায় অনেক ধানক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ তিনদিন ধানকাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে শনিবার সংরক্ষিত ছুটি ও রোববার বৌদ্ধপূর্ণিমার ছুটি মিলে তিনদিন ধানকাটা কর্মসূটি হাতে নেওয়া হয়। এ তিন দিনে অন্তত ২০ জন কৃষকের প্রায় ১৫ বিঘা জমির ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ রেখে ১১টি সেক্টরে ভাগ হয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ধান কেটে দিচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপপরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, জেলায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৪৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৪৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে।
এমকে