মঙ্গলবার টেক্সাসের স্কুলে গুলিচালনার ঘটনাকে ধরে এ বছর এখনও অবধি আমেরিকায় ৯ বার বন্দুকবাজির ঘটনা ঘটে গেল। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শোকার্ত স্বরে বলছেন, ‘‘স্রষ্টার নাম নিয়ে বলুন, আর কবে আমরা নড়ে বসব? জাতি হিসেবে আমাদের নিজেদেরই প্রশ্ন করতে হবে, কবে আমরা বন্দুক লবির মোকাবিলা করব?’’
আমেরিকার বন্দুক-লবি, অর্থাৎ যারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিরোধী। টেক্সাসের ঘটনা আরও একবার আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটি আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এলো। এর আগেও ডেমোক্র্যাট শিবির অনেক বার আইন সংস্কারের দাবি তুলেছে। কিন্তু বন্দুক-লবির চাপে পিছিয়ে আসতে হয়েছে। রিপাবলিকানদের একটা বড় অংশের সমর্থন বন্দুক লবির সঙ্গে রয়েছে। তাদের যুক্তি, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির নিরাপত্তার অধিকারের সঙ্গেই আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকারের প্রশ্নটি জড়িত। সুতরাং সেখানে কোনো রকম নিয়ন্ত্রণ এনে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ব্যক্তিসুরক্ষায় হাত দেওয়া যাবে না।
অন্য দিকে, বিরুদ্ধ পক্ষের যুক্তি হলো- অবাধে আগ্নেয়াস্ত্র বিকিকিনি হতে থাকলে ব্যক্তি নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে গণ নিরাপত্তাকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। আমেরিকায় পরপর গুলিচালনোর ঘটনায় তা প্রমাণ হয়ে গেছে। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পক্ষে কাজ করা আমেরিকার একটি সংস্থার রিপোর্ট বলছে, ২০০৯ সাল থেকে সে দেশে ২৭৪টি বন্দুকবাজির ঘটনা ঘটেছে, মারা গেছেন ১ হাজার ৫৩৬ জন। আমেরিকার এ বন্দুকবাজদের অনেকেই মানসিকভাবে সুস্থ নন বলেও মনে করা হচ্ছে।
তবে মানসিক অসুস্থতা বন্দুক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা বাড়ায় বই কমায় না বলে দাবি করে কানেটিকাটের ডেমোক্র্যাট সেনেটর ক্রিস মারফি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছেন, ‘‘দয়া করে মানসিক অসুস্থতার কথাগুলো তুলবেন না। পৃথিবীর মধ্যে আমেরিকা একমাত্র দেশ নয়, যেখানে মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিরা রয়েছেন। বরং পৃথিবীর মধ্যে আমেরিকা একমাত্র দেশ যেখানে এমন অবাধে ঢালাও আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়ার সুযোগ রয়েছে, যে কোনো অপরাধী, যে কোনো অসুস্থ-বিকৃত ব্যক্তি এখানে আগ্নেয়াস্ত্রের নাগাল পায়। তফাৎটা এইখানে।’’
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জমানায় গুলি চলেছিল কানেটিকাটের স্যান্ডি হুক বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে। সেই ঘটনা মনে করিয়ে ওবামা বলেছেন, ‘‘স্যান্ডি হুকের ১০ বছর আর বাফেলোর (সুপারমার্কেটে গুলিচালনা) ১০ দিন পর— আমাদের দেশ পঙ্গু হয়ে রয়েছে। ভয়ে নয়, বন্দুক লবি আর একটা রাজনৈতিক দলের জন্য, যারা এ ধরনের ট্র্যাজেডি রোখার ব্যাপারে কোনো সদিচ্ছা দেখায় না।’’