প্রথমে হুমকি। তারপরই বিক্ষোভকারীদের ‘শায়েস্তা’ করতে বুলডোজ়ার নিয়ে নেমে পড়ল যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন। মহানবী (স.) কে নিয়ে নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন প্রান্ত বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন মুসলিমরা।

শনিবার উত্তরপ্রদেশের সহারানপুর ও কানপুরে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে সম্পত্তি ধ্বংস করার কাজ শুরু করল যোগীর প্রশাসন। সহারনপুর পুলিশের শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিরাট সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে পুরকর্মীরা বুলডোজ়ার নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। সমাজে অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগে আটক দুই অভিযুক্তের বাড়ি বুলডোজ়ার চালিয়ে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। কানপুরেও জাফর হায়াত হাসমির ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের বাড়ি ভেঙে দিয়েছে কানপুর ডেভলপমেন্ট অথরিটি।

শুক্রবারের বিক্ষোভকারীদের ‘শায়েস্তা’ করতে বুলডোজার যে নামানো হবে, তার ইঙ্গিত অবশ্য আগেই দিয়েছিলেন যোগীর মিডিয়া অ্যাডভাইসর মৃত্যুঞ্জয় কুমার ও বিজেপির অন্য কয়েকজন নেতা।

শুক্রবারের ঘটনার পর শনিবার হুমকির সুরে মৃত্যুঞ্জয় টুইটারে লিখেছেন, ‘‘গোলমাল করছে যারা, তাদের মনে রাখতে হবে- প্রতি শুক্রবারের পরই শনিবার ঠিক আসবে।’’ এ বক্তব্যের সঙ্গেই বুলডোজ়ারের একটি ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি।

শুধু যোগী প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাই নয়, উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়ার বিজেপির বিধায়ক শলভমনি ত্রিপাঠীও সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, গ্রেফতার হওয়া কয়েক জন যুবককে মারছেন পুলিশকর্মীরা। কবে, কোথায় এ ঘটনা ঘটেছে— তা অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না। তবে এ ছবির সঙ্গে বিজেপি বিধায়ক লিখেছেন, ‘‘বিদ্রোহীদের রিটার্ন গিফট।’’ আদিত্যনাথের প্রাক্তন মিডিয়া অ্যাডভাইসর ছিলেন শলভ। পুলিশি মারের ছবি পোস্ট করে বিজেপি বিধায়কের উল্লাস বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। যোগী সরকারের মন্ত্রী ও প্রদেশ বিজেপির সভাপতি স্বতন্ত্র দেব সিংহও অভিযুক্তদের ঘরবাড়ি ভাঙতে বুলডোজ়ার চালানোর পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। যোগী নিজেও আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘যে সমাজবিরোধীরা গত কয়েক দিনে রাজ্যে অশান্তি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বিক্ষোভ করার কারণে সমাজে সম্প্রতি নষ্ট ও শান্তিভঙ্গের অভিযোগে সহারানপুরে ৬৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই শহরে মুজাম্মিল ও আব্দুল ওয়াকিরের বাড়ির কিছু অংশ শনিবার বুলডোজ়ার দিয়ে ভেঙে দিয়েছেন পুরকর্মীরা। তাঁদের অবশ্য দাবি, ওই নির্মাণ অবৈধ ছিল।

শুক্রবারে বিক্ষোভ করার কারণে বিভিন্ন অভিযোগে উত্তরপ্রদেশের ৭টি জেলা থেকে মোট ২৫৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে হাথরস থেকে ৫০ জন, প্রয়াগরাজ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৬৮ জনকে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন প্রয়াগরাজের রাজনৈতিক কর্মী জাভেদ মহম্মদ।

পুলিশের অভিযোগ, শুক্রবারের ঘটনার পিছনে মূল মাথা জাভেদই। জেলবন্দি জেএনইউ ছাত্র নেতা উমর খালিদের বাবা এসকিউআর ইলিয়াসের ‘ওয়েলফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়া’-র নেতা জাভেদ। ওই গ্রেফতারিকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে জাভেদের মুক্তির দাবি তুলেছেন ইলিয়াস।

প্রয়াগরাজের এসপি অজয় কুমার জানান, ২৯টি ধারায় ধৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। গ্যাংস্টার আইন ও জাতীয় সুরক্ষা আইনে মামলা চালানো হবে ধৃতদের বিরুদ্ধে।