রুশ হামলায় প্রায় ধ্বংসস্তূপ পূর্ব ইউক্রেন। তবু গোলাবর্ষণ অব্যাহত। সেভেরোডনেৎস্কে প্রায় ১০ হাজার মানুষ রুশদের হাতে ‘বন্দি’। সাহায্য হিসেবে বুধবার ১০০ কোটি ডলার অর্থমূল্যের নতুন যুদ্ধাস্ত্র ইউক্রেনে পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে আমেরিকা। আর বৃহস্পতিবার ইউক্রেনকে সমর্থন জানাতে সশরীরে কিয়েভে পৌঁছলেন ফ্রান্স, জার্মানি ও ইটালি—এ তিন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা। এ-ও জানালেন, তারা চান, ইউক্রেন অবিলম্বে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সদস্যপদ পাক।
সকালে পোলান্ড থেকে কিভ-গামী বিশেষ ট্রেন ছাড়ে। সওয়ারি ছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ় ও ইটালির প্রধানমন্ত্রী মারিয়ো দ্রাঘি। প্রতিবেশি দেশ রোমানিয়া সফরে ম্যাকরন বলেছিলেন, ‘‘আমাদের, অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নের, ইউক্রেন ও তার বাসিন্দাদের প্রতি স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন।’’ তারপরই আজ ম্যাকরনদের এ সফর। কিয়েভে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের ফটকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রপ্রধানদের স্বাগত জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি। রাষ্ট্রপ্রধানদের সফরের কারণে পুরো এলাকা নজরবন্দি করা হয়েছিল। নিরাপত্তা এতটাই আটসাট ছিল যে একটি মাছি গলারও উপায় ছিল না। এর আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসের ইউক্রেন সফরের সময়কালে কিয়েভে বোমা ফেলেছিল রাশিয়ার সেনাবাহিনী।
তবে এ বারের সফর নিয়ে বাড়তি উত্তেজনা রয়েছে। ইইউ-এ ইউক্রেনের জায়গা হবে কি না, তা হয়তো শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে। তার মুখে তিন গুরুত্বপূর্ণ ইইউ সদস্যের কিভ-সফরে কোথাও চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সাংবাদিক বৈঠকে জেলেনস্কির উদ্দেশে সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়, ‘‘আপনি যা চাইছেন, ইইউ কি আদৌ তা দেবে?’’ প্রেসিডেন্ট সপ্রতিভ ভাবে বলেন, ‘‘দেখা যাক।’’ তার পরেও প্রশ্ন আসে, ‘‘আপনি কি আশাবাদী?’’ এর আর কোনো উত্তর দেননি জেলেনস্কি। অতিথিদের নিয়ে প্রাসাদের ভিতরে চলে যান।
শোনা যাচ্ছে ইউক্রেন আশাবাদী হলেও বহু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য পদ পাওয়া নিয়ে। বিশেষ করে, ম্যাকরন ও শোলৎজের কথায় ভরসা পাচ্ছেন না অনেকে। ম্যাকরন আগে বলেছিলেন, ‘‘ইইউ-এর সদস্য পদ পেতে ইউক্রেনের বহু বছর লেগে যাবে। এক দশক পেরিয়ে গেলেও অবাক হওয়ার নয়।’’ কিন্তু আজ তিনি বললেন, অবিলম্বে ইউক্রেনকে ইইউ-এ জায়গা দেওয়া উচিত। আজ শোলৎজের উপস্থিতি নিয়েও অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন জেগেছে। একটি ভারী ব্রিফকেস নিয়ে গাড়ি থেকে নামেন জার্মান রাষ্ট্রনেতা। লাল কার্পেটে গিয়ে দাঁড়ানোর সময়ে নিজের পাশে সেটা নামিয়ে রাখেন। তবে কিছুক্ষণ পরই সেটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ম্যাকরন, শোলৎজের মতোদ্রাঘিও ইউক্রেনের ইইউ যোগ দেওয়ায় সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘ইটালি চায়, ইউক্রেন ইইউ-এ যোগ দিক। ইউক্রেনের মানুষ প্রতিদিন গণতন্ত্র রক্ষা ও স্বাধীনতার জন্য লড়ছেন। আমরা আর এ যোগদান পদ্ধতি ফেলে রাখতে পারি না।’’