বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের মূল্যস্ফাতি নিয়ে কথা ওঠেছে। আগামী (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও মূল্যস্ফীতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রথম চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত রূপরেখা রাখা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠেছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাজেট সংলাপে এ অভিযোগ তোলা হয়।
রাজধানী ঢাকার লেকশোর হোটেলে সম্প্রতি সংলাপে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট: প্রধান ছয় চ্যালেঞ্জের স্বীকৃতি এবং প্রস্তাবিত ও গৃহীতব্য পদক্ষেপসমূহ শীর্ষক এ সংলাপ হয়। সংলাপে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রহমান, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সংলাপে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, তাড়াহুড়ো করে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলে অর্থনীতিতে নানাভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে মূলস্ফীতি আরেক দফা বেড়ে যেতে পারে। তাদের কাছে মনে হয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বানানো দরকার ছিল। ধনী করদাতাদের করহার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা উচিত ছিল। সামাজিক নিরাপত্তা খাতেও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত ছিল। এতে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ত। বেশকিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে আরোপিত উচ্চহারে শুল্ককর কমানোর প্রয়োজন ছিল। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতো।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, গবেষণা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনেক সময়ই মেলে না। কারণটা হচ্ছে আমাদের বাস্কেট অনেক বড়। গ্রাম-শহর উভয় মিলে অনেক বড় বাস্কেট ধরেই মূল্যস্ফীতি হিসাব করে বিবিএস। কিন্তু গবেষণা সংস্থাগুলো ছোট বাস্কেট নিয়ে কাজ করেন। যেমন চালের দাম বেশি। এর প্রভাব সরাসরি গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর পড়াটাই স্বাভাবিক। গবেষণা সংস্থাগুলো সেই অংশ থেকেই তথ্য নিয়ে মূল্যস্ফীতির প্রভাবটা দেখান। ফলে অনেক বেশি মনে হয়। কিন্তু সার্বিকভাবে হিসাব করলে চিত্র অন্যরকম আসে।
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, প্রকৃত হিসাব করলে দেশে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি আছে। এ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রস্তাবিত বাজেটে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের রিজার্ভ, আমদানি, রপ্তানিসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান সঠিক নয়। বিবিএসের পেছনে টাকা খরচ হয়েছে, কিন্তু সক্ষমতা বাড়েনি। ফলে বিবিএসের পরিসংখ্যান নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে। কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আন্তর্জাতিক বাজারে চাপ সৃষ্টি করেছে, দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানি কমানো এবং মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল রাখার চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
সংলাপে জানানো হয়, সার্বিক বিবেচনায় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে। অর্থনীতির নেতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে- নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি, ভর্তুকির উচ্চ চাহিদা, মুদ্রার বিনিময় হারে নিম্নগামীতা, বৈদেশিক বাণিজ্যে বিপুল ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত হ্রাস পাওয়া ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া।
এমকে