সিলেট ও সুনামগঞ্জে আগামী দুই দিনে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করা হয়েছে। এরপর হয়তো পানি কমতে শুরু করবে সেখানে, কিন্তু দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যা দেখা দেবে তখন। ইতোমধ্যেই সিলেটে বিমান ও সারাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে, সড়ক যোগাযোগও বন্ধের উপক্রম। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মোবাইল নেটওয়ার্ক, বেশিরভাগ এলাকায় বন্ধ আছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। পানিতে ডুবেছে বিস্তৃর্ণ জনপদ। চারদিকে থৈ থৈ পানি। রাস্তা, দোকানপাট, বাসাবাড়ি, ঘরের মধ্যে পানি। কোথাও কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত। ফলে মানবেতর দিনানিপাত করছেন লাখ লাখ মানুষ। উজান থেকে নেমে আসা পানি ও বৃষ্টির কারণে সেখানে দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে এ বছর। এদিকে বানের পানি অপসারণে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টিকারী রাস্তা প্রয়োজনে কাটার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বানভাসিদের উদ্ধারে মাঠে রয়েছে সেনা, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসন। তাদের জন্য ২শ‘ টন চালসহ ৬০ লাখ নগদ টাকা ও ১৬ হাজার প্যাকেট শুকনাসহ অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তাছাড়া দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সর্বক্ষণ মনিটর করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন খোদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রা মন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। বলেছেন, ভারতের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে। যে কারণে আগামী দুই দিনে সেখানে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের। শনিবার (১৮ জুন) রাজধানী ঢাকায় সচিবালয়ের নিজ দফতরে দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক জরুরি সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, গত ১৪ জুন থেকে উজান থেকে নেমে আসা পানি ও বন্যায় দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ১০ জেলার ৬৪ উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২২ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে এবারের বন্যা ও পাহাড়ি ঢল, সিলেটের ৬০ শতাংশ প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুনামগঞ্জ, সেখানে ৯০ শতাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। গত দু’দিনে চার ফুট করে পানি বেড়েছে।
ওদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, সুরমা ছাড়া দেশের সব প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে ১১ নদীর ১৭ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার উপরে উঠেছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১৭ জেলায় বন্যা দেখা দিতে পারে। উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
সিলেটের প্রবীণ ব্যক্তিদের অভিমত, এ রকম বন্যা আগে কখনো দেখা যায়নি। সোবাহানীঘাট-চালিবন্দর বিশ্বরোডে এর আগে কখনো পানি না উঠলেও এবার উঠেছে। বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের মধ্যে পানি ঢুকে পড়ায় সিলেট-সুনামগঞ্জের গোটা এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও ৬ ঘণ্টা পর কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়। এদিকে সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে, ২০ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
এমকে