২৬ জুন (রোববার) ভোর ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে দেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এতে দক্ষিণের ২১ জেলার সঙ্গে অন্যান্য জেলার বিশেষত রাজধানী ঢাকার সড়ক পথে যোগাযোগের যে সঙ্কট ছিল তা দূর পুরোপুরি দূর হয়ে গেল। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে নবদিগন্ত। দেশে প্রতি বছর ০.৮৪ শতাংশ দারিদ্র্য নিরসনের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ সেতু অনন্য অবদান রাখবে। সেই সঙ্গে সার্বিকভাবে দেশের উৎপাদন ১.২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। সেতুর এ অবদানের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৫ জুন (শনিবার) আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয়েছে এ সেতু। দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এ অবকাঠামো উদ্বোধন করেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তার আগে চালেঞ্জ হিসেবে এ সেতু নির্মাণ করে বর্তমানের আওয়ামী লীগ সরকার। সেতু নির্মাণের শুরু থেকেই নানা ষড়যন্ত্র হয়, প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করা হয়। অভিযোগ আনা হয় দুর্নীতির। দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক পর্যন্ত সহায়তা করেনি। এমন পরিস্থিতিতে একদম নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর নিজস্ব অর্থায়নের এ সেতু দেশের মানুষের কাছে এখন অন্যন্য গৌরবের।
এদিকে সেতু উদ্বোধনের জন্য শনিবার সকাল ১০ টার দিকে রাজধানীর পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে সেতুর মাওয়া প্রান্তে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী। ১০টা ৫০ মিনিটে সেতুর উদ্বোধনী ভাষণ দিতে মঞ্চে আসেন তিনি। ভাষণ শেষে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধন খাম, সিলমোহর ও ১০০ টাকার স্মারক নোট উদ্বোধন করেন। এরপর গাড়িবহর নিয়ে ১১টা ৫৫ মিনিটে টোল প্লাজায় পৌঁছান, সেখানে সেতু পার হওয়ার জন্য নিজের হাতে টোল প্রদান করেন। ১১টা ৫০ মিনিটের কিছু আগে ফলক উন্মোচন স্থানে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বিশেষ মোনাজাত হয়। এরপর ১১টা ৫৯ মিনিটে সেতুর ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সেতু পার হয়ে জাজিরা প্রান্তে সেতুর উদ্বোধন উপলেক্ষ্যে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী।
ওদিকে সেতু পারাপারে গত মাসেই টোল নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সেতু বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা, কার বা জিপে ৭৫০ টাকা, পিকআপ ভ্যানে ১ হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে ১ হাজার ৩০০ টাকা, ছোট বাসে (৩১ আসন বা এর কম) ১ হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে (৩২ আসন বা এর বেশি) ২ হাজার টাকা, বড় বাসে (৩ এক্সেল) ২ হাজার ৪০০ টাকা, ছোট ট্রাকে (৫ টন পর্যন্ত) ১ হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (৫ টনের বেশি থেকে ৮ টন) ২ হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ টনের বেশি থেকে ১১ টন পর্যন্ত) ২ হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাক (৩ এক্সেল পর্যন্ত) ৫ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রেইলার (৪ এক্সেল পর্যন্ত) ৬ হাজার টাকা ও ট্রেইলার (৪ এক্সেলের বেশি) ৬ হাজারের সঙ্গে প্রতি এক্সেলে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে যোগ করে টোল দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক গড়ে উঠবে। দেশের শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। সেতুর দুপারে পর্যটন শিল্পেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে। এ সেতু এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগের একটা বড় লিংক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, কাজের গুণগত মানে কোনও আপস করা হয়নি। বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ দিয়ে এ সেতু নির্মিত হয়েছে। সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত পাইল বসানো হয়েছে। ভূমিকম্প প্রতিরোধ বিবেচনায় ব্যবহৃত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
এমকে