তৎপর বিদেশি কূটনীতিকরা

১৬ জুলাই ২০২২

প্রতি বারের মতো এবারও জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছেন ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কুটনীতিকরা। তারা সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। সাক্ষাকালে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নাক গলাতে চাওয়ার ইচ্ছা না থাকার কথা জানালেও অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশার কথা জানাচ্ছেন তারা। অবশ্য মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে প্রভাবশালী কোনো দেশেরও কিছু করার নেই। আর দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বিদেশিদের কাছে বিএনপির ধরণা দেওয়াটা তাদের রাজনৈতিক দৈন্যতার বহিঃপ্রকাশ বলেই মনে করছেন তারা।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নির্বাচনের বছর দেড়েক সময় বাকি থাকলেও কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের পর কূটনীতিকরা নির্বাচন ইস্যূতে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেছেন।  গত ৮ জুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও ২৬ জুন  অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুর ইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ৩ জুলাই ১৪টি দেশের রাষ্ট্রদূত একসঙ্গে  ইসির সঙ্গে বৈঠক করেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাইকমিশনের নেতৃত্বে অরগানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত (ওইসিডি) ৩৮টি দেশের মধ্যে সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ডেনমার্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, তুরস্ক এবং জাপানের রাষ্ট্রদূত ইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিটি সাক্ষাতকালে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়।

গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের সাথে নবনিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলি সাক্ষাৎ করেছেন। এদিকে ৭ জুন ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, আগামী বছরের শেষে নির্বাচন হওয়ার কথা। এ নির্বাচন নিয়ে সরকারের দিক থেকে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি লক্ষ করেছি। গত নির্বাচনের তুলনায় এবার ভালো, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করছি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তারা উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেন এ রাষ্ট্রদূত।

১৩ জুলাই ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি এবং ১২ জুলাই জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক জিন লুইস বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে সাক্ষাৎ করেন। গত ১৭ মার্চ জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টারের সাথে সাক্ষাৎ হয় বিএনপি নেতাদের।

এদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছেই বিএনপির দৌড়ঝাঁপ। কিন্তু দেশের জনগনই এ দেশের মালিক, তারাই প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। কোনও বিদেশি রাষ্ট্রদূত কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি কাউকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসানোর অধিকার রাখে না।  আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বিএনপি যতই বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলুক; এতে কোনও লাভ হবে না। যুক্তরাষ্ট্র যতো বড় ক্ষমতাধর দেশই হোক না কেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে তাদের কোনও কিছু করার নেই।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বিদেশিদের কাছে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা মোটেও কাম্য নয়।  বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়াটা রাজনৈতিক দৈন্যতার বহিঃপ্রকাশ।

এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর