দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলেন সুনামগঞ্জের বিচারক জাকির হোসেন

২০ জুলাই ২০২২

সাইফ উল্লাহ, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

সুনামগঞ্জে ৫২ মামলায় লঘু অপরাধে অভিযুক্ত ৬৫ শিশুকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের জন্য ছয় শর্তসহ মা-বাবার স্নেহ মমতায় বেড়ে ওঠার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সময়ে আরেক রায়ে টুকটাক ভুল বুঝাবুঝির কারণে আদালতের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত ২৫ দম্পতিকে একই ছাদনাতলায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন আদালত। বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এ আদেশ দেন। এর আগে কয়েক দফায় ১৪৫ মামলায় ২০০ জন শিশুকে মা-বাবার কাছে এবং ২২৫ টি মামলা আপোষে নিস্পত্তি করে দাম্পত্য শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এ আদালত।

জানা যায়, সুনামগঞ্জে মারামারি ও সামান্য পরিমাণে মাদক বহনসহ লঘু অপরাধে ৫২ টি মামলায় কোমলমতি ৬৫ জন শিশুকে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে জড়ানো হয়েছিল। এসব শিশুদের আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হত। এ কারণে শিশুদের ভবিষ্যত ও শিক্ষাজীবন ব্যহত হচ্ছিল। শিশুদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার এ অসুবিধা থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে মামলার নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এ বিচারক।

আদালত রায় ঘোষণাকালে বলেছেন, এমনিতেই ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত শিশুজীবন, এর মধ্যে মামলা মোকদ্দমা থাকলে তাদের স্বাভাবিক ও শিক্ষাজীবন ব্যাহত হবে। আদালত ছয় শর্তে তাদেরকে মামলা থেকে মুক্তি দেন। রায় ঘোষণার পর আদালতের পক্ষ থেকে সব শিশুর হাতে জাতীয় পতাকা, মুক্তিযুদ্ধের বই, ফুল ও ডায়রি হাতে তুলে দেন আদালতের কর্মীরা।

আদালতের দেওয়া ছয় শর্ত হচ্ছে- বই পড়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, হাস-মুরগি গবাধি পশু পালন, এসি-টিভি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের যে কোন একটি বিষয়ে কারিগরি বা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ, প্রতিদিন দুইটি ভাল কাজ করে আদালতের দেওয়া ডায়েরিতে লিখে রাখতে হবে। প্রত্যেকে কমপক্ষে ২০ টি করে গাছ লাগিয়ে পরিচর্চা করা, ধর্মকর্ম করা এবং বাবা-মায়ের আদেশ নির্দেশ মেনে চলা, মাদক থেকে দূর থাকা ও ভবিষ্যতে অপরাধের সাথে জড়ানো যাবে না। একই সময়ে ২৫ মামলায় ২৫ দম্পতির দুর্বিসহ জীবন-যাপনের অবসান ঘটান। যৌতুকের দাবিসহ নানাবিধ কারণে নির্যাতনের স্বীকার হয়ে সংসার থেকে বিতাড়িত ২৫ নারী স্বামীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আদালতে মামলা করেছিলেন। বিচারক উভয়ের বক্তব্য শুনে তাদের সন্তানসহ নিজেদের মঙ্গলের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্প্রীতর বন্ধন এটে ২৫ যুগলের পারিবারিক মিলনের ব্যবস্থা করে দেন।

দুটি রায়ের বিষয় নিশ্চিত করে, সুনামগঞ্জ শিশু ওমানব পাচার আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট হাসান মাহবুব সাদী ও পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু বললেন, শিশুরা তাদের আপন ঠিকানা ফিরে পেল, মা-বাবার দুঃশ্চিন্তার অবসান হল এবং সন্তানকে নিজের কাছে রেখে সংশোধনের সুযোগ পেল। স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকার যন্ত্রণা এবং তাদের সন্তানরা মা-বাবার বিচ্ছেদের অশান্তি থেকে মুক্তি পেলো। আদালতের এমন উদ্যোগে মামলা দ্রুত নিস্পত্তি হচ্ছে, মামলা জটও কমে যাচ্ছে।

এমকে

 


মন্তব্য
জেলার খবর