ইউরোপের সর্ববৃহৎ ইউক্রেনের জাপোরিজিয়া পরমাণু কেন্দ্র। যুদ্ধের শুরুতেই এটি নিজেদের দখলে নিয়েছে রাশিয়া। এ কারণে এ পরমাণু কেন্দ্রটি নিয়ে শুরু থেকেই উদ্বিগ্ন গোটা ইউরোপ। বুধবার অঞ্চলে রাশয়া রকেট হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে ইউক্রেন।
পরমাণু চল্লির একেবারে কাছে এসে পড়েছে রকেটগুলো। এ ঘটনায় ১৩ জন সাধারণ বাসিন্দা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১১ জন। এর মধ্যে ৫ জনের অবস্থা গুরুতর। এ হামলার পর ইউক্রেন ফের সতর্ক করে বলেছে, ক্ষেপণাস্ত্র পরমাণু চুল্লিতে এসে পড়লে ভয়ানক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে গোটা ইউরোপ।
জাপোরিজিয়ার আঞ্চলিক গভর্নর ভ্যালেন্টিন রেজনিচেঙ্কো সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে জানিয়েছেন, ওই এলাকায় মোট ৮০টি রকেট হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্দেশে তার বার্তা, সাইরেন শুনলেই যেন সকলে ঘরের ভিতর ঢুকে যান।
রেজনিচেঙ্কো লিখেছেন, ‘‘একটা ভয়ানক রাত ছিল। আমি সকলকে বলছি, সকলের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, রুশদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচান।’’ সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে মারগানেটস শহরে। জাপোরিজিয়া পরমাণু কেন্দ্রের কাছেই এ শহর। হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।একের পর এক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
রাশিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ ছুড়ে দিয়েছে ইউক্রেনের দিকে। তাদের দাবি, হামলা চালাচ্ছে ইউক্রেন। এ প্রসঙ্গে পরমাণু কেন্দ্রের কর্মীরা জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি হয়েছিল, সেটি হওয়ার ঠিক আগে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন রুশ কর্মীরা। অতএব তারা এ বিষয়ে আগে থেকেই জানতেন।
Ads by
চের্নোবিল পরমাণু বিপর্যয়ের আতঙ্ক ফিরে আসছে লোকের মনে। ১৯৮৬ সালে, তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত ইউক্রেনে সেই বিপর্যয়ে কয়েকশো মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা ইউরোপে।
এ দিকে, আজ ইরানের একটি কৃত্রিম উপগ্রহ কাজাখস্তান থেকে উৎক্ষেপণ করেছে রাশিয়া। সন্দেহ করা হচ্ছে, ইউক্রেনের উপরে নজরদারি চালাতে এটিকে ব্যবহার করবে মস্কো। বৈকানুর উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে সয়ুজ রকেটে চেপে খৈয়াম নামের এই কৃত্রিম উপগ্রহ পাড়ি দিয়েছে পৃথিবীর কক্ষপথে। ইরান অবশ্য দাবি করেছে, এই কৃত্রিম উপগ্রহে রাশিয়ার কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। যদিও একটি আমেরিকান দৈনিকের খবর, মস্কো তেহরানকে জানিয়েছে, তারা আগামী কয়েক মাস কিংবা তারও বেশি এটিকে সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করবে। কৃত্রিম উপগ্রহটির নাম রাখা হয়েছে পারস্যের কবি ও গণিতবিদ ওমর খৈয়ামের নামে। এটি তৈরি করেছে রাশিয়া। অত্যাধুনিক ক্যামেরা বসানো হয়েছে এতে। তেহরান এটির সাহায্যে ইজ়রায়েলের স্পর্শকাতর অঞ্চল ও পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর উপরে নজরদারি চালাবে বলে খবর। এ নিয়ে কিছু না বললেও ইরানের দাবি, ‘‘প্রথম দিন থেকে এটি তেহরানের নিয়ন্ত্রণে। অন্য কোনও দেশ এই কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার করবে না।’’
কিন্তু রাশিয়া-ইরানের কাছাকাছি আসাকে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখছে। এত দিন মহাকাশ গবেষণায় আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়া সহাবস্থান বজায় রেখে এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে রাশিয়ার দাবি, তাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলা না হলে ২০২৫ সালের মধ্যে তারা আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করবে।