বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খুব বেশি দেরি নেই। ওদিকে যুক্তরাজ্যে আগামী মাসে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবে। নতুন প্রধানমন্ত্রী আসার পর দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হবে, বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে তার ভূমিকা কেমন হতে পারে, কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে, কিম্বা আদৌ প্রভাব ফেলতে পারে কী-না, সে প্রসঙ্গে আলোচনা হচ্ছে রাজনৈতিক পাড়ায়। তাছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন-ই কেমন আশা করছে দেশটি, সেটা নিয়েও যুক্তি-তর্ক চলছে। বিষয়টি অনেকটাই খোলাশা করে দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন। সোমবার (২২ আগস্ট) মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর শিরোনামের এক অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি। রাজধানী ঢাকার গুলশানের এক রেস্টুরেন্টে এ অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসনের কথায়, বাংলাদেশের ক্রমাগত সমৃদ্ধি বজায় রাখায় জন্য একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাজ্য। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ করাটাও অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছে তারা। পাশাপাশি সব নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, সঠিকভাবে ভোট গণনা এবং নির্বাচনের ফলাফল সবার দ্বারা সমর্থিত হওয়ার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছে দেশটি। আর সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হবে বলেও আশা তাদের।
যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার জানান, যুক্তরাজ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী যেই হোক না কেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আগের মতোই শক্তিশালী থাকবে। তাছাড়া বাংলাদেশে চলমান বিনিয়োগ অব্যাহত থাকার পাশাপাশি আরও বিনিয়োগ হবে।
বাংলাদেশের ক্রমাগত সাফল্য প্রসঙ্গে রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন- এ সাফল্য ও সমৃদ্ধির চাবিকাঠি হলো গুণগত প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা, যে প্রতিষ্ঠানের ওপর জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা রয়েছে। একটি দেশে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে সেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে পারে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বক্তব্যে বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রতিরক্ষা নীতি, সমুদ্র নীতি, রোহিঙ্গা সমস্যা, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধসহ প্রাসঙ্গিক বিষয় ওঠে এসেছে। বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তোরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ সময় অভিনন্দন জানান। তিনি জানান, এলডিসি থেকে উত্তোরণের পর ডিসিটিএস-এর আওতায় বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক সুবিধা দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে যুক্তরাজ্য নিরলসভাবে কাজ করছে। যদিও আফগানিস্তান, ইয়েমেন, এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সঙ্কট প্রকট হওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে অর্থায়নে কিছুটা সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার জানান, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প রফতানিতে নেতিবাচক কোনো প্রভাব ফেলেনি। এলডিসি থেকে টেকসই উত্তরণে বাংলাদেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে ইচ্ছুক যুক্তরাজ্য। বাংলদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে প্রথমবারের মতো হওয়া বিনিয়োগ সংলাপ দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে বলেও মনে করছেন তিনি। তবে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও তার সঠিক প্রয়োগ, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাজ্য কিছুটা উদ্বিগ্ন, জানিয়েছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে বলেন, ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা অব্যাহত রাখবে যুক্তরাজ্য।
এমকে