শেষ দু’ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২১ রান। দু’দলেরই জয়ের সম্ভবনা ছিল। ১৯তম ওভারে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান হার্দিক পান্ডিয়া। শেষ ওভারের সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ বলে ৭। রবীন্দ্র জাদেজা আউট হয়ে যাওয়ায় ম্যাচে তখন টানটান উত্তেজনা। জয়ের জন্য ভারতের দরকার ৩ বলে ৬ রানের। সপাটে ছক্কা মেরে দিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। দুই বল হাতে রেখেই জয় পায় রোহিত শর্মার দল।
রোববার এশিয়া কাপের বহুল প্রত্যাশিত ম্যাচে পাকিস্তানকে পাঁচ উইকেটে হারায় ভারত। ব্যাটে-বলে চৌকস নৈপুণ্যে ম্যাচসেরা হার্দিক পান্ডিয়া। এ জয়ের মাধ্যমে যেন বিশ্বকাপে হারের বদলা নিলো ভারত।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করে বড় সংগ্রহ করতে পারেনি পাকিস্তান। ১৪৭ রানে থামে তারা। এদিন টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠান ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তৃতীয় ওভারেই বিদায় নেন পাকিস্তানের ইনফর্ম ব্যাটার বাবর আজম। দলীয় ১৫ রানে পাকিস্তানের বিশ্বসেরা ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরান ভারতীয় পেসার ভুবনেশ্বর কুমার। শর্ট ফাইন লেগ অঞ্চলে ভারতীয় ফিল্ডার আর্শদীপ সিংয়ের হাতে ধরা পড়েন পাকিস্তান অধিনায়ক। ৯ বলে ২ চারে তার সংগ্রহ ১০ রান। শর্ট বলে খোঁচা দিয়ে উইকেট খোয়ান ওয়ানডাউন ব্যাটার ফখর জামান। পেসার আবেশ খানের বলে ব্যক্তিগত ১০ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ফখর। দলীয় ৮৭ রানে হার্দিক পান্ডিয়ার ডেলিভারিতে উইকেট খোয়ান ইফতিখার আহমেদ। ২২ বলে ২৮ রান করে ইফতিখার উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ওই শর্ট বলে। ১৩ ওভার শেষে ৯০/৩ সংগ্রহ নিয়ে চাপ বাড়ে বাবরদের ওপর।
ইনিংসের শুরুতে দুবার আউট হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েও বড় ছাপ রাখতে ব্যর্থ হন মোহাম্মদ রিজওয়ান। মন্থর ইনিংসে ৪২ বলে ৪৩ রান করেন রিজওয়ান। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রক্ষা পান তিনি। ভুবনেশ্বর কুমারের করা ওই ওভারের ষষ্ঠ বলে কট বিহাইন্ডের জোরালো আবেদন জানায় ভারত। এবার আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেন রোহিত শর্মা। ব্যাটে বলের কোনো স্পর্শ লাগেনি। আবার বেঁচে যান রিজওয়ান। ঘটনা দুটি ছিল লঙ্কান আম্পায়ার রুচিরা পালিয়াগুরুগের প্রান্তে। উইকেটের অন্যপ্রান্তে ছিলেন বাংলাদেশি আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল। এশিয়া কাপে কোনো বাংলাদেশি আম্পায়ারের প্রথম ম্যাচ এটি। হার্দিক পান্ডিয়ার বলে আউট হওয়ার আগে চারটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান রিজওয়ান। দুই বল পর খুশদিল শাহকেও (৭ বলে ২) সাজঘরের পথ দেখান ভারতীয় পেসার।
সুবিধা করতে পারেননি আসিফ আলীও। ৬ বলে ৯ রান করে ভুবনেশ্বর কুমারের শিকারে পরিণত হন পাকিস্তানের হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান । আর্শদীপের করা পরের ওভারে আউট মোহাম্মদ নওয়াজও। ১১৪ রানে সপ্তম উইকেট হারায় পাকিস্তান। ১৯তম ওভারে শাদাব খান ও নাসিম শাহকে পরপর দুই বলে আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান ভুবনেশ্বর কুমার। তবে পাকিস্তানের হয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে দৃঢ়তা দেখান ১১ নম্বর ব্যাটার শাহনাওয়াজ দাহানি। ৬ বলে ২ ছক্কায় ১৬ রান করেন তিনি। হারিস রউফ ৭ বলে ২ চারে ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ ৩ ওভারে ৩৩ রান তোলে পাকিস্তান। এক বল বাকি থাকতে অলআউট হয় বাবর আজমের দল। বল হাতে ৪ ওভারের স্পেলে ২৬ রানে ৪ উইকেট নেন ভুবনেশ্বর কুমার। চার ওভারে ২৫ রানে তিন উইকেট শিকার অপর পেসার হার্দিক পান্ডিয়ার। আর্শদীপ সিং দুই ও আবেশ খান নেন এক উইকেট।
অপেক্ষাকৃত ছোট টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে শুরুতেই ধাক্কা খায় ভারত। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় বলে ঝলক দেখান নাসিম শাহ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে ভারতীয় ওপেনার কেএল রাহুলকে বোল্ড করেন পাকিস্তানের অভিষিক্ত পেসার। একই ওভারে আরেক সুযোগ এসেছিল তার। ওভারের চতুর্থ বলে ক্যাচ তুলে দেন বিরাট কোহলি। কিন্তু ক্যাচ লুফে নিতে ব্যর্থ হন পাকিস্তানি ফিল্ডার ফখর জামান। এরপর ভারতের ইনিংস এগিয়ে নিচ্ছিলেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। তবে পরপর দুই ওভারে দুজনকেই সাজঘরে ফিরিয়ে নিজেদের আশা জাগান মোহাম্মদ নেওয়াজ। দলীয় ৫০ রানে আউট হন রোহিত (১৮ বলে ১২ রান)। আর ৯.১তম ওভারে বড় শট খেলতে গিয়ে পাকিস্তানি ফিল্ডার ইফতিখার আহমেদের হাতে ক্যাচ দেন কোহলি। ৩৪ বলে ৩৫ রান করেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক। এতে ১০ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬২/৩-এ। ১২.২তম ওভারে দলীয় ৮৯ রানে সূর্যকুমার যাদবকে আউট করে ম্যাচে উত্তেজনা ফেরান নাসিম শাহ। তবে পঞ্চম উইকেটে ৩৩ বলে ৫২ রানের জুটি গড়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন রবীন্দ্র জাদেজা (২৯ বলে ৩৫) ও হার্দিক পান্ডিয়া (১৭ বলে ৩৩*)। বল হাতে ৩.৪ ওভারে ৩৩ রানে তিন উইকেট নেন মোহাম্মদ নেওয়াজ।