প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মানুষের কষ্ট লাঘবে যা যা করা দরকার, তার সরকার সবই করে যাচ্ছে। প্রতিটি খাতের অবস্থা চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক খাতে যে সংকট দেখা দিচ্ছে, সেটা মোকাবিলার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জ্বালানি সংকট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন সমস্যা বিষয়ে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) আনা এক সাধারণ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদকে এ সব কথা বলেন।
এর আগে সাম্প্রতিক সমস্যায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ সংসদে আলোচনার মাধ্যমে জাতিকে জানাতে কার্যপ্রণালীর ১৪৭ বিধিতে প্রস্তাবটি আনেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। জানান, সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থান, বিশ্বে প্রতি মুহূর্তে অর্থনীতির সূচকগুলোর উঠানামা গভীরভাবে পর্যালোচনা করেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় সরকার।
ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই পদক্ষেপ নিতে হবে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সব বিবেচনা করে জ্বালানি তেল ও সারের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পরপর দাম বাড়ালে অনেক বেশি দাম বাড়াতে হতো। মানুষের কথা চিন্তা করে এটা করা হয়েছে। এখন জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমানো হয়েছে, ৫ টাকা।
দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং ডলার সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপদে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নত দেশগুলোও বিপদে পড়ে সাশ্রয়ী হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার জন্য মানুষের কষ্ট হচ্ছে। সেটা আমি উপলব্ধি করি বলেই নিজেও এখন সব বাতি জ্বালাই না। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার পরিবর্তে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনেক কাজ করি। এভাবে কিন্তু সাশ্রয় করি, সাশ্রয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি এবং রাশিয়ার ওপর ডলারের অবরোধসহ বিভিন্ন কারণে বাজারে সৃষ্ট ডলার সংকট উত্তরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে কিছু লোক মানুষের দুঃসময়ে নিজের ভাগ্য গড়তে চায়, অধিক মুনাফা অর্জন করতে চায়। এ বিষয়ে কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। নিত্যপণ্য ভোজ্য তেল, জ্বালানি তেল, ডাল চিনিসহ অনেক জিনিস আমদানি করতে হয়। খাদ্যপণ্যের দাম বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। আমেরিকা-ইউরোপেও এমন মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, যা ধারণার বাইরে ছিল। ইউরো জোনে ৪০ বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ। ইউরোপে গ্যাস, ইলেক্ট্রিসিটি এমনকি পানিও রেশনিং করা হচ্ছে। জাপানে, চীনে লোডশেডিং হচ্ছে।
সংসদ নেতা বলেন, তেলের দাম নিয়ে কথা উঠছে। ২০২১ সালে ডিজেলের গড় মূল্য ছিল ৮৩ দশমিক ৯৩ ডলার প্রতি ব্যারেল, এখন ১৩২ দশমিক ৫৩ ডলার। এর চেয়ে বেশিও হয়েছিল। ইউরিয়া সারের দাম ৭৫ টাকা কেজি ক্রয়মূল্য। সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে ৫৩ টাকা। টিএসপিতে ভর্তুকির পরিমাণ ৩৭টাকা। চিনির চাহিদা ২০ লাখ টন। উৎপাদন খুবই কম হওয়ায় চাহিদার ৯৬ ভাগ আমদানি করতে হয়। মসুর ডালও একই অবস্থা, ৬৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। এক বছর চিনি ও মসুর ডালের আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ। চাল, গম ও আটার দাম বেড়েছে ১০–১৫ শতাংশ।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশে পাঁচ–ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মত রিজার্ভ আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বৈদেশিক রিজার্ভে তিন মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করার টাকা থাকলে ঝুঁকিমুক্ত বিবেচনা করা হয়। এখানে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তার সরকার যত ঋণ নেয়, সেটা সময়মতো পরিশোধ করে। কখনও ডিফল্টার হইনি, হবেও না।
এমকে