চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিষদ। ঘটনাচক্রে, সে পরিষদের সদস্য চীনও। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিষদের হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশলেট তার মেয়াদ শেষের প্রাক মুহূর্তে যে রিপোর্ট পেশ করেছেন, তাতে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে- উত্তর-পশ্চিমের ‘স্বশাসিত’ শিনজিয়াং প্রদেশে চীন সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। রিপোর্ট পেশ করে চিলির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মিশেলের ঘোষণা, ‘‘আমি বলেছিলাম কার্যকালের মেয়াদ শেষের আগেই আমি এটি পেশ করব। আমি কথা রাখতে পেরেছি।”
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন জানানো হয়েছিল, আন্তর্জাতিক চোরাবাজারে বিক্রি হওয়া কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বড় অংশের মালিক চীনের বন্দিশিবিরে আটক হতভাগ্য উইঘুর মুসলিমরা! জোর করে তাদের অঙ্গ কেটে বিক্রি করছে বেইজিং!
চল্লিশের দশকে স্বাধীন রাষ্ট্র পূর্ব তুর্কিস্তান দখল করে শিনজিয়াং প্রদেশ নামকরণ করেছিলেন চীনের প্রয়াত চেয়ারম্যান মাও জে দং। তারপর থেকেই সেখানকার বাসিন্দা উইঘুর মুসলিমদের একাংশ চীনা দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের লড়াই শুরু করেন। আর তখন থেকেই শুরু হয় ‘বিদ্রোহ দমনের’ অছিলায় নৃশংস অত্যাচার। গত ছ’দশকে চীনা সেনার হামলায় সেখানে লক্ষাধিক মুসলিম নিহত হয়েছেন।
গত কয়েক বছর ধরেই অভিযোগ উঠেছে, উইঘুর ও তুর্কিভাষী ১০ লক্ষেরও বেশি ইসলাম ধর্মাবলম্বীকে শিনজিয়াংয়ের বিভিন্ন ‘ডিটেনশন ক্যাম্পে’ বন্দি করে রাখা হয়েছে। বলপূর্বক তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টেও উইঘুরদের বন্দি করার অভিযোগে নিশানা করা হয়েছে শি জিনপিং সরকারকে।
এ পর্যন্ত সরকার শিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় ১৬ হাজার মসজিদ ধ্বংস করেছে চীন। এর মধ্যে গত চার বছরেই অধিকাংশ মসজিদ ভাঙা হয়েছে। নষ্ট করা হয়েছে, মাজার, কবরস্থান ও ইসলামিক তীর্থযাত্রার পথ। শিনজিং প্রদেশের রাজধানী উরুমকি এবং বাণিজ্য শহর কাশগড়ে প্রকাশ্যে নামাজ পড়া, রোজা পালনের মতো ধর্মীয় কর্মসূচীতেও নানা বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।