বিশ্ব বিবেকের প্রতি আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করুন। শিশুকে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দিন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) প্রদত্ত ভাষণে এ আহবান জানান। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে এ অধিবেশন চলছে। ১৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর এ অধিবেশনে সংস্থাটির ১৯৩টি সদস্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান অংশ নিচ্ছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বরাবরের মতো এবারও বাংলায় ভাষণ দেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ বা একতরফা জবরদস্তিমূলক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মতো বৈরী পন্থা কখনও কোনও মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনাই সঙ্কট ও বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম উপায়।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের অবসান দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সংঘাত বিশ্বকে একটি সম্মিলিত অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত করেছে। তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশুসহ গোটা মানবজাতিকেই শাস্তি দেওয়া হয়। এর প্রভাব সব মানুষের জীবন-জীবিকা মহাসঙ্কটে পতিত হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। মানুষ খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষত শিশুরাই বেশি কষ্ট ভোগ করে।
একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব আমরা দেখতে চাই উল্লেখ করে বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, যেখানে থাকবে বর্ধিত সহযোগিতা, সংহতি, পারস্পরিক সমৃদ্ধি এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে রেখে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব। বিশ্বব্যাপী নানা সংকটের কথাও তুলে ধরেন এ সময় শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপ, সরকারের আমলে দ্রুতগতিতে দেশ এগিয়ে যাওয়ার চিত্র ওঠে আসে।
মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিক রোহিঙ্গাদের দেশে আশ্রয় দেওয়ার কথা উল্লেখ করে এ সংকট সমাধানে জাতিসংঘের কার্যকর ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। তাদের প্রত্যাবাসনের অনিশ্চয়তা সর্বস্তরে ব্যাপক হতাশার সৃষ্টি করেছে। মানবপাচার ও মাদক চোরাচালানসহ আন্তঃসীমান্ত অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি উগ্রবাদকেও ইন্ধন দিতে পারে। এ সঙ্কট প্রলম্বিত হতে থাকলে এ উপমহাদেশসহ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। শেখ হাসিনার ভাষণে জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, ফিলিস্তিন এবং অভিবাসন বিষয়ক বৈশ্বিক ও বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখযোগ্যভাবে স্থান পেয়েছে।
এমকে