দ্রুত খাদ্য সহায়তা চান ভোলার জেলেরা

১২ অক্টোবর ২০২২

কামরুজ্জামান শাহীন,ভোলা:

ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালে সরকার প্রদত্ত ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা দ্রুত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভোলার জেলেরা। কারণ, দেরীতে এ সহায়তা পেলে ধার-দেনা করে চালাতে হয় সংসার। ধান-দেনায় দায়ে বার বার সংকটে পড়তে হয়। এতে মানবেতর দিনানিপাত করতে হয় তাদের।

 প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে  গত ৭ অক্টোবর থেকে আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত- ২২ দিন দেশে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময় দেশব্যাপী ইলিশ পরিবহণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময়ও নিষিদ্ধ থাকবে। তাই না চাইলেও এ সময় মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হয় জেলেদের। এ সময় ইলিশ আহরণে বিরত থাকা জেলেদের সরকার ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা দেয়।  কিন্তু প্রতিবারই এ খাদ্য সহায়তা হাতে পেতে দেরী হয় বলে অভিযোগ।  শুধু তাই নয়, নিবন্ধিত হয়েও নিষেধাজ্ঞার সময়ে সব জেলের হাতে এ খাদ্য সহায়তা না পৌছানোর অভিযোগও রয়েছে।

উপকূলীয় বিভিন্ন জেলে পল্লী সূত্রে জানা গেছে,  এখন ইলিশ ধরা বন্ধ। তাই বিভিন্ন ঘাটে ভেড়ানো হয়েছে শত শত জেলে নৌকা-ট্রলার। জেলেদের মধ্যে কেউ জাল বুনছেন, কেউবা ঘাটে অলস সময় পার করছেন। কেউ আবার নৌকা ট্রলার মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ বাড়ি ফিরে গেছেন। ঘাটে নেই হাঁকডাক-কোলাহল। বোরহানউদ্দিনের বঙ্গাপুর ইউনিয়নের জয়া গ্রামের জেলে মো. হেলাল বলেন, তেতুঁলিয়া নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাই। এখন মাছ ধরা বন্ধ। তাই ঘাটে নৌকা নোঙ্গর করেছি। এখন মেরামত করছি। জেলে মতলব বলেন, স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারে ৫ সদস্য চালাতে হয়, মাছ ধরেই জীবিকা চলে। ইলিশ ধরা বন্ধ, আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে খাদ্য সহায়তার চাল পেলে ভালো হতো। লালমোহন উপজেলার নাজিরপুর এলাকার জেলে আবু বক্কার বলেন, আমরা সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে মাছ শিকারে যাই না। কিন্তু, আমাদের কিছু দাবি আছে সরকারের কাছে। যথাসময়ে খাদ্য সহায়তা দেওয়া এবং নিষেধাজ্ঞার সময়ে এনজিও কিস্তি বন্ধ রাখা। এগুলো হলে আমাদের মত অনেক জেলে পরিবারগুলোর অনেক উপকার হবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা নদীতে যায়, তারা নিরুপায় হয়েই যায়।

চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচরের জেলে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারে ৪ সদস্য চালাতে হয়, মাছ ধরেই জীবিকা চলে। ইলিশ ধরা বন্ধ, আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে খাদ্য সহায়তার চাল পেলে উপকার হবে।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার জেলেদের জন্য খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে। সেই খাদ্য সহায়তা নানা জটিলতায় ঠিক সময়ে পান না জেলেরা। কবে পাবেন তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১ লক্ষ ৫৭ হাজার জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা পাবেন ১ লক্ষ ৩২ হাজার জেলে। তাদের জন্য ২ হাজার ৫ শত ৮০ টন খাদ্য সহায়তার চাল বরাদ্দ হয়েছে।  বাকি ২৫ হাজার জেলে বঞ্চিত হবে এ সহায়তা থেকে।

চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন মিনার জানালেন, দ্রুত সময়ে জেলেদের খাদ্য সহায়তা (ভিজিএফ) চাল বিতরণের জন্য গত ৬ অক্টোবর চালের ডিও ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখন  উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার অফিস এটা বাস্তবায়ন করবে। ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদউল্লাহ বলেন, নিষেধাজ্ঞা সময়ে জেলেরা যাতে নদীতে না যায়, সে জন্য ঘাটগুলোতে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা করা হয়েছে।  ১১ অক্টাবর ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নে জেলেদের পূনর্বাসনের খাদ্য সহায়তার চাল বিতরণ করা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর