আসামে মুসলিমদের সংগ্রহশালা  বন্ধ করলো রাজ্য সরকার

২৮ অক্টোবর ২০২২

ভারতের আসামে বাংলাভাষী মুসলমানদের একটি সংগ্রহশালা বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। মাত্র দু’দিন আগে খোলা হয়েছিল 'মিঞাঁ মিউজিয়াম' নামের ওই সংগ্রহশালাটি। সরকারি প্রকল্পে বাসস্থানের জন্য দেয়া একটি বাড়িতে ওই মিউজিয়াম গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। তিনজন উদ্যোক্তাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে বাংলাভাষী মুসলিমদের অভিযোগ, তাদের জনগোষ্ঠীকে ব্যবহার করে রাজনীতি করার জন্যই ওই মিউজিয়ামটি গড়া হয়েছিল।

 

আসামের মিঞাঁ কারা?

গোয়ালপাড়ার 'মিঞাঁ মিউজিয়াম' নিয়ে আসামের রাজনীতি এখন সরগরম। ডাপকারভিটা গ্রামের একতলা বাড়িটি মোহর আলির। সেখানেই চালু হয়েছিল ওই মিউজিয়ামটি।

 

পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জেলা, বিশেষ করে ময়মনসিংহ, রংপুর ইত্যাদি অঞ্চল থেকে যে বাংলাভাষী মুসলমান কৃষকরা আসামে বসতি গড়েছিলেন সেই ব্রিটিশ আমল থেকে, তাদের মিঞাঁ বলে ডাকে আসামের একটা বড় অংশের মানুষ।

 

মিঞাঁ কবি ফারহাদ ভূঁইয়া বলেন, ‘মিঞাঁ কোনো কমিউনিটি না। পূর্ববঙ্গ থেকে আসা বাংলাভাষী মুসলমানদেরই তাচ্ছিল্য করে মিঞাঁ বলে আসামের মানুষ। বহু বছর ধরেই এটা চলে আসছে। তার ফলে আমাদের মধ্যেও একটা অংশ এখন নিজেদের মিঞাঁ বলে ভাবতে শুরু করেছে।’

 

কী কী ছিল মিঞাঁ মিউজিয়ামে?

ওই মিউজিয়ামে লাঙল, হাল, মাছ ধরার সরঞ্জাম, গামছা, লুঙ্গি ইত্যাদি যেসব দ্রব্য মূলত বাংলাভাষী মুসলমান কৃষকরা ব্যবহার করেন, সেগুলোই প্রদর্শিত হয়েছিল।

 

কিন্তু বাড়িটি যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর গ্রামীণ আবাস প্রকল্পের অধীনে দেয়া হয়েছিল, তাই সেই বাড়ি বসবাস করা ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে না। এ যুক্তি দেখিয়ে সরকার মিউজিয়ামটি বন্ধ করে দিয়েছে।

 

তবে মিঞাঁ মিউজিয়ামটির আদৌ কী প্রয়োজন ছিল? প্রশ্ন তুলেছেন খোদ আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা বলেন, ‘লাঙ্গলটি শুধু মিঞাঁরা ব্যবহার করে? অসমীয়া মানুষও তো লাঙ্গল ব্যবহার করে। মাছ ধরার যে সরঞ্জামটা রাখা হয়েছে, সেটাও তো তপশীলী জাতির মানুষ ব্যবহার করে। গামছাও ছিল দেখা গেছে, সেটা তো আসামের গামছা। শুধুমাত্র লুঙ্গিটাই ওরা ছাড়া আর কেউ ব্যবহার করে না।’

 

মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘সরকারের কাছে তারা এটা প্রমাণ করুক যে লাঙল শুধুমাত্র মিঞাঁরাই ব্যবহার করে, অসমীয়ারা করে না। অসমীয়াদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়ে গিয়ে মিঞাঁ মিউজিয়াম খুলেছে।’ এ মিউজিয়ামের অর্থায়ন কীভাবে হলো, সেটাও তদন্ত করে দেখা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

 

এদিকে কবি ফারহাদ ভূঁইয়া অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর সাথে একমত নন। তিনি বলেন, ‘যদি কেউ নিজেদের কমিউনিটির সামগ্রী সংরক্ষণ করতে চায়, তাকে আমি খারাপ মনে করি না। কিন্তু বিষয়টার রাজনীতিকরণ হয়ে গেছে। কিছু রাজনীতিবীদ আমাদের এ বাংলাভাষী মুসলমানদের ব্যবহার করছে ব্যক্তিগত রাজনীতির স্বার্থে। কিন্তু বাংলাভাষী মুসলমানরাই আসলে ভুক্তভোগী হচ্ছে আর লাভবান হবে বিজেপি।’

 

তার ব্যাখ্যা, বাংলাভাষী মুসলমানদের পরিধান লুঙ্গি ওই মিউজিয়ামে রাখা হয়েছিল। লুঙ্গির কথা বিশ্বশর্মাও বলেন। আর এ লুঙ্গির প্রসঙ্গ তুলেই বাংলাভাষী মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে শুরু করেছে বিজেপি। বিশ্বশর্মা মাঝে মাঝেই বাংলাভাষী মুসলমানদের নিয়ে মন্তব্য করে থাকেন। খবর বিবিসির।


মন্তব্য
জেলার খবর