দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পাশাপাশি প্রভিশন ঘাটতিও বাড়ছে। নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় গেল সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ৮ ব্যাংকের এ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। তবে প্রয়োজনের তুলনায় কিছু ব্যাংক বাড়তি প্রভিশন সংরক্ষণ করায় পুরো ব্যাংকিং খাতে এ ঘাটতি ১৩ হাজার ৫২৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক ৮টির মধ্যে অর্ধেকই সরকারি, বাকিগুলো বেসরকারি খাতের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রভিশন ঘাটতির বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে আচে। এ বিষয়ে প্রযোজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে তারা।
তথ্য বলছে, প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা সরকারি চার ব্যাংক হলো— বেসিক, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক। এ চার ব্যাংক মিলে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো হলো— স্ট্যান্ডার্ড, বাংলাদেশ কমার্স, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ও ন্যাশনাল ব্যাংক। তাদের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৮ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। এর আগে গত জুনেও প্রভিশন ঘাটতিতে ভোগে ৯ ব্যাংক। এ মাস শেষে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৯৩১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ঋণ বিতরণে নিয়ম অনুযায়ী তার গুণমান বিবেচনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) হিসেবে জমা রাখতে হয়। এটা রাখা হয় মুলত কোনো ঋণ শেষ পর্যন্ত খেলাপি ঋণে পরিণত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক যেন আর্থিক ঝুঁকিতে না পড়ে সে জন্য। অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ, সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়।
জানা গেছে, প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা সরকারি ৪ ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি বেসিক ব্যাংকের, চার হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক, ঘাটতি ৩ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক, ঘাটতি তিন হাজার ১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আর জনতা ব্যাংকের ঘাটতি ৫৯৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
অন্যদিকে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি- ৭ হাজার ৪৭৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। দ্বিতীয়তে আছে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ঘাটতির পরিমাণ ৩৪৪ কোটি ৬৮ লাখ। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১৪৬ কোটি ৭৭ লাখ এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ১৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকায় ঘাটতিতে পড়েছে।
তথ্যানুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩১ হাজার ১২২ কোটি টাকা।
এমকে