‘মাটির ব্যাংকের’ অর্থে মোটরসাইকেলে তেতুলিয়া-টেকনাফ ভ্রমণ করলেন চাটমোহরের দম্পতি!

২৫ নভেম্বর ২০২২

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি:

এতো দূরের রাস্তা; ২ হাজার কিলোমিটার, মোটরসাইকেলে ভ্রমণ- এসব বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রথম দিকে পরিবারের সবাই আপত্তি করেছিল। তবে শেষমেশ মাসহ অন্যদের সমর্থন পেয়েছি। ব্যস! তারপর দিনক্ষণ ঠিক করে যাত্রা শুরু। বাড়ি থেকে পুরোটা পথই আমরা মোটরসাইকেলে ভ্রমণ করেছি। তবে গণনায় দূরত্ব ধরা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ জিরোপয়েন্ট- ৯২৩ কিলোমিটার। আর ভ্রমণ রুটের আশেপাশে থাকা দর্শনীয় স্থান দেখাসহ সব মিলিয়ে ভ্রমণ করা হয়েছে ২ হাজার কিলোমিটার। মোটরসাইকেলে নিজের ভ্রমণ নিয়ে এমন তথ্যই দিলেন বকুল রহমান।

বকুল রহমানের বাড়ি পাবনার চাটমোহর শহরের পাঠানপাড়া মহল্লায়, পুরো নাম তার রাসেল রহমান বকুল। বেশ মোটাসোটা দেহের অধিকারি বকুল গবাদি পশুর (ভেটেনারি ফার্মেসী) ওষুধ বিক্রেতা। পাশাপাশি দৈনিক ভোরের কাগজে প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা করছেন অনেকদিন হচ্ছে। সম্প্রতি তিনি তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ মোটরসাইকেলে ভ্রমণ করেছেন তার স্ত্রী আকলিমা আনোয়ার রত্নাকে নিয়ে। এ দম্পতির মাত্র একটি সন্তান রয়েছে। ভ্রমণটা ঝঁকিপূর্ণ হওয়ায় নিরাপদ রাখার জন্য তাকে সঙ্গে নেননি তারা, রেখে গিয়েছিলেন সন্তানের নানার বাড়িতে। তাদের ভ্রমণের বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

কলেজ জীবন থেকেই ভ্রমণের নেশা পেয়ে বসে বকুল রহমানকে। শুধু ভ্রমণই নয়, তার রয়েছে স্বেচ্ছায় বিনামূল্যে রক্তদানের নেশাও। সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও পদচারণা রয়েছে তার। বাদকযন্ত্র ছাড়াই যখন-তখন মন চাইলে দরাজ গলায় গেয়ে থাকেন গান।

প্রতিটা ভ্রমণের জন্য ইচ্ছার পরই যেটা বেশি প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে আর্থিক সংকুলান। বকুল রহমান বলছিলেন, মাটির ব্যাংকে টাকা গোছাতাম। গত ছয় মাস ধরে গোছানো টাকার সমষ্টি নিয়েই ভ্রমণ করলাম এবার। এর সঙ্গে যোগ করে জানান, যতজন বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন রাস্তায় ছিল- তারা সবাই আতিথিয়তা দিয়ে মুগ্ধ করেছে আমাদের। আসলে নিজ এলাকা থেকে বের হলেই জানা যায়- নিজ এলাকার মানুষকে এলাকার বাইরে দূরে থাকা মানুষগুলো কতটা ভালোবাসে!

ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মোটরসাইকেল ভ্রমণকালে প্রকৃতির যত কাছে নিয়ে যেতে পারে, বাস বা ট্রেন সেটা পারে না। মোটরসাইকেল ভ্রমণের স্বাদটাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। আর এতো দূরের রাস্তা মোটরসাইকেলে একা একা ভ্রমণ করা যায় না। তাই যুগল ভ্রমণ করার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। দুই হাজার কিলোমিটার মোটরসাইকেলে ভ্রমণ করার মতো সাহস, স্বাধ এবং সাধ্য- এগুলো সবার হয় না। আমার স্ত্রীর এ সাহসটা ছিল। তাছাড়া আমার জানা মতে এখন পর্যন্ত দেশের কোন দম্পতি একসঙ্গে মোটরসাইকেলে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ভ্রমণ করেনি। আর নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস এবং আল্লাহর উপরে ভরসা করে মূলত টুর প্ল্যানটা করি। ভ্রমণে মোটরসাইকেল ও সফরসঙ্গী হিসেবে স্ত্রীকে বেছে নেওয়া আর পেছনের উদ্দেশ্যে এভাবেই জানাচ্ছিলেন বকুল।

যাত্রা প্রসঙ্গে বকুল রহমান জানান, চাটমোহর থেকে বগুড়া মহাস্থানগড় যাই আমরা। তারপরে নওগাঁ বৌদ্ধবিহার, জয়পুরহাট হিলি হয়ে কান্তজির মন্দির দিনাজপুর, সেখান থেকে পঞ্চগড় হয়ে তেতুলিয়া জিরো পয়েন্ট এবং বাংলাবান্ধা পোঁছাই। বাংলাবান্ধা থেকে শুরু করে টেকনাফ জিরো পয়েন্ট হয়ে সমুদ্রপাড় ধরে মেরিন ড্রাইভ হয়ে একদম বাংলাদেশের ম্যাপের লেজ পর্যন্ত। যাওয়ার পথে সংসদ ভবন, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি জাতীয় স্মৃতিসৌধ দেখে গেছি। টেকনাফ থেকে সীতাকুণ্ড, সেখান থেকে পানাম নগর সোনারগাঁ হয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটি দেখে সিরাজগঞ্জ হয়ে চাটমোহর ফিরে আসি। নিরাপত্তার কারণে রাতে ভ্রমণ থেকে বিরত ছিলাম আমরা।

ভ্রমণের প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বকুলের ভাষ্য- আপনি যত ঘুরবেন, তত শিখবেন; জানবেন। প্রতিটা ভ্রমণে আপনাকে শিক্ষা দিবে। সেই শিক্ষা নিয়ে আগামীর পথ চলতে আপনার অনেক সহজ হবে। নতুন নতুন জিনিস দেখবেন, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবেন। সবচেয়ে বড় কথা ভ্রমণে থাকলেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি আপনার কৃতজ্ঞতা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। যে যেখানেই, যেভাবেই ভ্রমণ করেন না কেন- নিরাপদ ভ্রমণ করবেন এবং পরিবেশ দূষণ করবেন না।

এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর