বিজয়ের মাসে নুতন বিজয়!

০৮ ডিসেম্বর ২০২২

বিজয়ের মাসে নুতন জয় বাঙালির মাঝে এনে দিয়েছে টাইগাররা। ভারতকে কুপোকাত করে নিয়েছে সিরিজ জয়ের স্বাদ। এ জয়টা এমন সময় পেয়েছে, যখন ফুটবল বিশ্বকাপ উন্মমাদনায় বিশ্ব, রাজনৈতিক উত্তাপ চড়া দেশে। এসব ইস্যূ পেছনে ফেলে সাধারণ মুখে মুখে ছিল টাইগার বাহিনীর প্রশংসা। জয়টা আরেকটা ইতিহাস সৃষ্টি করলো, থাকবে ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে।। প্রথমে ব্যাট করে মেহেদী হাসান মিরাজের সেঞ্চুরিতে ভর করে ২৭১ রান করে টাইগাররা। ফলে ২৭২ রানের লক্ষ্য পায় ভারত। জয়ের জন্য খেলতে নেমে ২৬৬ রানে থামে ভারতের ইনিংস। ফলে ৫ রানের জয়ে ২-০ তে সিরিজ নিশ্চিত করল টাইগাররা। এ নিয়ে দীর্ঘ ৭ বছর পর ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতল বাংলা। আর মিরপুরে পরপর দু’ম্যাচ হারল ভারত। ফলে যেন আবারো ফিরে এলো ২০১৫।

 

বুধবার মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয় দু’দল। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক লিটন দাস। ব্যাট করতে নেমে ভালো সূচনা করতে পারেননি টাইগার ওপেনাররা। ১৩ রানেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন দু’ব্যাটার। ১১ রানের এনামুল আর ৭ রানে ফেরেন লিটন দাস। শুরুতে উেইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় লিটনরা। এর রেশ না কাটতেই আউট হন শান্ত। দলীয় রান তখন ৫১, উমার মালিকের বলে বোল্ড হন তিনি। এর আগে স্কোরবোর্ডে ২১ রান যোগ করেন। শেখর ধাওয়ানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ৮ রানে আউট সাকিব। দলীয় ৬৪ রানে প্রথম সারির ৪ ব্যাটসম্যানের বিদায়ে ম্যাচ থেকে যেন ছিটকেই পড়েছিল।

 

ক্রিজে তখন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। তাদের জুটিতে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এ জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ১২ রানে থামেন মুশি। তার ক্যাচটি ধরে শেখর। এরপর ক্রিজে নামেন গত ম্যাচে দুর্দান্ত পারফর্ম করা মেহেদী হাসান মিরাজ। এ জুটিতে ভর করে বাংলাদেশ লড়াকু স্কোর গড়ে। মাহমুদুল্লা ৭৭ রানে উইকেট কিপার কেএল রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। তিনি ফিরলেও দলের জন্য লড়াকু স্কোর গড়ার ভীত তৈরি করে দিয়ে যান।

 

মাহমুদুল্লাহ বিদায় নিলেও ক্রিজ আঁকড়ে ছিলে মিরাজ। নাসুম আহমেদকে সাথে নিয়ে শেষে ঝড়ো ইনিংস খেলেন। দু’জনেই দু’প্রান্ত থেকে সমানে চার-ছক্কা হাঁকাতে থাকে। ভারতের বিপক্ষে ২৭১ রানের বড় স্কোর দাঁড় করান। সেইসাথে অনবদ্য সেঞ্চুরি তুলে নেন মিরাজ।

 

জবাবে ব্যাট করতে নেমে সুবিধা করতে পারনি ভারত। ১৩ রানে ভারতের ২ উইকেট আর ৬৫ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে বল হাতে শুরু থেকেই দারুণ কিছুর আভাস দিচ্ছিল টাইগার বোলাররা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ২৬ রান সংগ্রহ করে ফের উইকেট হারায় ভারত, ১১ করে সাকিবের শিকার ওয়াশিংটন সুন্দর। আগের ম্যাচের পারফর্মার লোকেশ রাহুল ৫ নম্বারে নেমে সুবিধা করতে পারেননি, ফিরেছেন ১৪ রানে, মিরাজের শিকার হয়ে।

 

তবে এরপর দলের হাল নিজের হাতে তুলে নেন শ্রেয়াস আইয়ার। অক্ষর প্যাটেলকে সাথে নিয়ে গড়ে তুলেন শতাধিক রানের জুটি। তাদের দুজনের ১০৭ রানের জুটি ভাঙেন মিরাজ, ৮২ রান করা আইয়ারকে ফিরিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। দলীয় ১৮৯ রানে ভয়ংকর হতে থাকা অক্ষর প্যাটেলকে ফেরান ইবাদত। আউট হবার আগে অক্ষর করেন ৫৬ রান।

 

 

দ্রুত শার্দুল ঠাকুর আর দীপক চাহারকে হারালে ৪৩ ওভারে ২১৩ রানে ৮ উইকেটে পরিণত হয় ভারতের স্কোরকার্ড। সেখান থেকে মোহাম্মদ সিরাজকে সাথে নয়ে ২৫ বলে ৩৯ রানের জুটি গড়ে খেলা জমিয়ে তুলেন ইনজুরি থেকে ফেরা রোহিত শর্মা। শেষ ওভারে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২০ রান। ২ চার আর ১ ছক্কায় ৫ বলে ১৪ রান তুলে ফেললে শেষ বলে সমীকরণ দাড়ায় ১ বলে ৬ রান। তবে মোস্তাফিজের সেই বলে রান নিতে পারেননি রোহিত শর্মা। ফলে ৫ রানের শাসরুদ্ধকর জয় পায় বাংলাদেশ।

 

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

 

বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৭১/৭ (এনামুল ১১, লিটন ৭, শান্ত ২১, সাকিব ৮, মুশফিক ১২, মাহমুদউল্লাহ ৭৭, আফিফ ০, মিরাজ ১০০*, নাসুম ১৮*; চাহার ৩-০-১২-০, সিরাজ ১০-০-৭৩-২, শার্দুল ১০-১-৪৭-০, উমরান ১০-০-৫৮-২, ওয়াশিংটন ১০-০-৩৭-৩, আকসার ৭-০-৪০-০)।

 

ভারত : ৫০ ওভারে ২৬৬/৯ (কোহলি ৫, শিখর ধাওয়ান ৮, শ্রেয়াস আইয়ার ৮২, লোকেশ রাহুল ১৪, সুন্দর ১১, রোহিত ৫১, অক্ষর ৫৬ , শার্দুল ৭, সিরাজ ২; মিরাজ , এবাদত ১০-০-৪৫-৩, মুস্তাফিজ , সাকিব ১০-১-৩৯-২, নাসুম ১০-০-৫৪-০, মাহমুদউল্লাহ ৩.৫-০-৩৩-১ )।

 

ফল : ৫ রানে জয়ী বাংলাদেশ।


মন্তব্য
জেলার খবর