সারা দেশে গণমিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবি আদায়ে আগামী ২৪ ডিসেম্বর এ মিছিল হবে। এর মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী সমমনা দলগুলোকে নিয়ে সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি। সমমনা দলগুলোও তাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফা দাবি তুলে ধরে গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। রাজধানী ঢাকায় সায়দাবাদ এলাকায় গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ থেকে ঘোষণাটি দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হত্যার প্রতিবাদে ১৩ ডিসেম্বর সারা দেশে বিক্ষোভ করার ঘোষণাও দেন এ সময় খন্দকার মোশাররফ।
সমাবেশ থেকে যে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই আগামী দিনে যুগপৎ আন্দোলন হবে। গেল বৃহস্পতিবার রাতে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ দফা চূড়ান্ত হয়। গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকায় সমাবেশ উপস্থিত ছিলেন না দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে আগামী ২৪ ডিসম্বর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহর ও জেলায় জেলায় গণমিছিল করবে জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশও। একই সঙ্গে বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে তারাও ১০ দফা দাবি জানিয়েছে। শনিবার (১০ ডিসেম্বর) জামায়াতের প্রচার বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
ওদিকে সমাবেশের পর বিএনপির ১০ দফা গ্রহণযোগ্য দাবি করে এটাকে জাতীয় সমঝোতা দলিলের প্রাথমিক খসড়া ও দেশের গনতন্ত্রকামী প্রতিবাদী মানুষের অধিকারের সনদ বলে আখ্যা দিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি। আর বিএনপির গণমিছিলে যৌথভাবে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এ বিবৃতি দিয়েছে ১১ দলের শীর্ষ নেতারা। দলগুলো হচ্ছে— বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, এনপিপি, বাংলাদেশ জাতীয় দল জাগপা, বাংলাদেশ এলডিপি, ইসলামী ঐক্য জোট একাংশ (মাওলানা আব্দুর রকিব), এনডিপি, ন্যাপ-ভাসানী,মুসলিম লীগ, জমিয়তে একাংশ (মহিউদ্দিন ইকরাম) ও সাম্যবাদী দলের একাংশ (সৈয়দ নুরুল ইসলাম)। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার ও শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের অভিন্ন লক্ষ্যে এ লড়াই যুগপৎ ধারায় ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর রূপ নেবে।
বিএনপির ১০ দফা দাবিগুলো হচ্ছে— ১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ও ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ। ২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্র্বতীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন। ৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্র্বতীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা। ৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারা বন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনও ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনও মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা। ৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালা-কানুন বাতিল করা। ৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল। ৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা। ৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থপাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সবক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। ৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা। এবং ১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।
এমকে