দেশে সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি করে বিভিন্ন গ্রুপ। এতে পণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। পথে পথে পণ্য সরবরাহে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে না পারলে দাম কমে আসবে। তাই এ চাঁদাবাজি বন্ধ করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সহায়তা চেয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়। সোমবার (৪ এপ্রিল ) সাংবাদিকদের কাছে এমনটাই বলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির প্রথম সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
এদিকে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, সভায় বাজার ও দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ১৬ দফা সুপারিশ করেছে এ টাস্কফোর্স। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সভা হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছে, সড়কে পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতিও বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
এদিকে টাস্কফোর্সের ১৬ দফা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- ১. সমুদ্র ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং শুল্ক স্টেশনগুলো রমজানের সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খালাসে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে। ২. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনে ফেরি পারাপারে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃক সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে।৩. পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ৪. কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও মজুতদারদের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বাড়াতে হবে। ৫. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা প্রদান করতে হবে। ৬. পাইকারি হতে খুচরা পর্যায়ে অতিরিক্ত মুনাফার বিষয়ে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। ৭. অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ-২০১১ এর ফরম ‘ঘ’ অনুসরণপূর্বক সরবরাহ আদেশ (ঝ.ঙ) প্রদান এবং প্রকৃত ডিলার ছাড়া হাত বদল হওয়া ঝ.ঙ তে পণ্য সরবরাহ না করার বিষয়ে মিলগুলোকে বাধ্য করতে হবে। ৮. ভোজ্যতেল ক্রয়-বিক্রয়ে পাইকারি হতে খুচরা— সব পর্যায়ে পাকা রসিদ (প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানাসহ মুদ্রিত তথ্য) প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। ৯. ভোজ্যতেলের মিলগেট, পরিবেশক ও ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ, সঠিকভাবে প্রদর্শন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ১০. মজুত ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত সব আইনে ব্যবস্থা নিতে হবে। ১১. ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী মিল অপরিশোধিত তেল আমদানির পরিমাণ, পরিশোধনের পরিমাণ ও পরিবেশকদের কাছে সরবরাহের পরিমাণে সামঞ্জস্য রয়েছে কি-না, সেটি বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে নিশ্চিত করবে। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কাছে পাঠাতে হবে। ১২. অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ- ২০১১ এর অনুচ্ছেদ ৯(১), ৯(২), ৯(৩), ১২(১) ও ১২(৪) এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩৮, ৪০ এবং ৪৫ যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতর, সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ১৩. মিলগুলোকে পরিবেশক নিয়োগ সংক্রান্ত হালনাগাদ তালিকা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে দিতে হবে। ১৪. ভোজ্যতেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় ঘটালে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। ১৫. খুচরা পর্যায়ে মূল্যতালিকা প্রদর্শন এবং প্রতিটি ধাপে পাকা রশিদ সংরক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রমের পুনরাবৃত্তি রোধকল্পে মিলগুলোতে তদারকি জোরদার করতে হবে। এসব সুপারিশের মধ্যে কয়েকটি ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন হয়েছে, বাকিগুলোও বাস্তবায়নে টাক্সফোর্স কাজ করছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব।
এমকে