হাতছাড়া রাজস্ব, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

০৬ এপ্রিল ২০২২

দেশের তামাক খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। ফলে তামাকপণ্য দিন দিন সস্তা ও সহজলভ্য হয়ে পড়ছে। এতে একদিকে যেমন রাজস্ব হাতছাড়া হচ্ছে সরকারের, অন্যদিকে তেমন হুমকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) ভার্চুয়াল এক গোলটেবিল বৈঠকে বিষয়টি জানান সংসদ সদস্য, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সহজ ও শক্তিশালী তামাক কর নীতি বাস্তবায়নে বাধা এবং করণীয় শীর্ষক এ বৈঠক যৌথভাবে আয়োজন করে গবেষণা ও তামাকবিরোধী অ্যাডভোকেসি সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা)। সংবাদ বিষয়টি জানিয়েছে প্রজ্ঞা।

বৈঠকে ওঠে আসে, ২০১৬ সালে তামাক কর কাঠামো সহজ করতে ও শক্তিশালী তামাক করনীতি গ্রহণের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ৬ বছরেও সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। প্রচলিত তামাক কর কাঠামো অত্যন্ত জটিল, এটা তামাক নিরুৎসাহিতকরণে যথেষ্ট নয়। সিগারেটে বহুস্তর বিশিষ্ট অ্যাড-ভ্যালুরেম করকাঠামো চালু রয়েছে। ফলে বাজারে সস্তার সিগারেট পাওয়া যায়। এতে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে  তুলনামূলক কমদামি সিগারেট বেছে নিচ্ছেন অনেকে। পাশাপাশি উচ্চস্তরের সিগারেটকে নিম্নস্তরের ঘোষণা দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। তাছাড়া সম্পূরক শুল্ক না বাড়িয়ে কেবল মূল্যস্তর বৃদ্ধির মাধ্যমে সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়। ফলে বর্ধিত মূল্যের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে তামাক কোম্পানির পকেটে। এতে তামাক কোম্পানি লাভবান হলেও রাজস্ব হাতছাড়া হচ্ছে সরকারের। আর তামাক করের ভিত্তি ও করহার কম হওয়ায় বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য (জর্দা ও গুল) সহজলভ্য থেকে যাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। এফসিটিসি আর্টিকেল ৬ ধারায় বলা হয়েছে, তামাকের চাহিদা হ্রাসে একটি সহজ তামাক কর ও মূল্য নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কথা। স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর সরকার এ নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে।

বৈঠকে জানানো হয়, ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে এক জায়গায় আনা হলে বিদ্যমান জটিল কর ব্যবস্থা সহজ হবে। তাছড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সব সিগারেট ব্রান্ডে অভিন্ন করভারসহ মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক (খুচরা মূল্যের ৬৫ শতাংশ)  প্রচলনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সিগারেটর খুচরা মূল্য প্রতি ১০ শলাকা নিম্নস্তরে ৫০ টাকা, মধ্যম স্তরে ৭৫ টাকা, উচ্চস্তরে ১২০ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরে ১৫০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক পণ্য নিরুৎসাহিত করতে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক খুচরা দরের ভিত্তিতে সিগারেটের ক্ষেত্রে নিম্নস্তরে ৩২.৫০ টাকা, মধ্যম স্তরে ৪৮.৭৫ টাকা, উচ্চস্তরে ৭৮ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরে ৯৭.৫০ টাকা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যেও সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক প্রচলনের প্রস্তাব করা হয়। ২০২২-২৩ থেকে ২০২৭-২৮ অর্থবছরে সিগারেটের ব্রান্ডগুলোর মধ্যে দাম ও করহারের ব্যবধান কমিয়ে মূল্যস্তরের সংখ্যা ৪টি থেকে ২টিতে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়।

বৈঠকে জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, এনবিআর-এর সাবেক  চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী হোসেন আলী খোন্দকার, টিভি টুডে’র এডিটর ইন চিফ মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিআইআইএসএস’র রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর, সিপিডির রিসার্চ ফেলো  সৈয়দ ইউসুফ সাদাত, সিটিএফকে- বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মোস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সাবেক সমন্বয়কারী রূহুল কুদ্দুস, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী এবং ঢাকা আহছানিয়া মিশনের হেলথ ও ওয়াশ সেক্টর পরিচালক ইকবাল মাসুদ, প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার ও  প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের অংশ নেন।

এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর