প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে টাকার মান

৩১ ডিসেম্বর ২০২২

এক বছরের ব্যবধানে দেশে ডলারের বিপরীতে  ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ হয়েছে  টাকার অবমূল্যায়ন তথা মান। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ দরের হিসাবে এ অবমূল্যায়নের পরিমাণ ৩৫ দশমিক ২০ শতাংশ। আর খোলা বাজারে ডলারদরের হিসাবে এর পরিমাণ ৩৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট হিসাবে এটা জানা গেছে। টাকার এ অবমূল্যায়ন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। বছরের প্রথম দিকে স্থিতিশীল থাকলেও মে মাস থেকে চরম অস্থিরতা বিরাজ করে ডলারবাজার। এখন অস্থিরতা কিছুটা কমলেও সংকট রয়েছে প্রকট। শুধু ডলারের ক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য প্রধান প্রতিযোগী মুদ্রার বিপরীতেও কমেছে টাকার মান। আর কেবল বাংলাদেশই নয়, ডলারের বিপরীতে প্রায় দেশের মুদ্রার মানই কমেছে।

মূল্যস্ফীতির হার ঠেকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দফায় তাদের নীতি সুদের হার বাড়ায়। ফলে দাম বেড়ে যায় ডলারের, নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয়, মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে বাংলাদেশসহ অনেক দেশ সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করেছে।

রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় দেশে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমায় ডলার সংকট প্রকট হয়। বেড়ে যায় আমদানি ব্যয়, বাড়ে পণ্যের দাম। এমন পরিস্থিতিতে  রিজার্ভ থেকে ডলারের জোগান দিয়ে চেষ্টা করা হয় বাজার নিয়ন্ত্রণের। তারপরও ঊর্ধ্বগতিতে বেড়েছে ডলারের দাম। এর আগে এভাবে দাম বাড়েনি ডলারের।  নতুন বছরেও ডলার সংকট থাকার আশঙ্কা রয়েছে। সঙ্গে আরও কমতে পারে  রিজার্ভ। যদিও মার্চ থেকে বৈদেশিক ঋণের অর্থ ছাড় হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। জুনের দিকে পাওয়া যেতে পারে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ। তারপর হয়তো কিছুটা চাপ কমতে পারে ডলারের। 

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, চলতি বছরের শুরুর দিনে ব্যাংকহিসাবে  ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা ছিল প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য। গত বৃহস্পতিবার বছরের শেষ লেনদেনের দিনে ১০৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে প্রতি ডলার। এ হিসাবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ২১ টাকা ২০ পয়সা, অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। গত অক্টোবরে ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ১১৬ টাকা। এ দরে সরকারি খাতে ব্যাংকগুলো আমদানির জন্য আগাম ডলার বিক্রি করেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এ দরেই ডলার কিনে পরিশোধ করেছে ঋণ। এ হিসাবে এক বছরে ডলারের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা ২০ পয়সা, টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩৫ দশমিক ২০ শতাংশ।  একইভাবে বছরের শুরুর দিকে  খোলা বাজারে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা। এখন এ দর বেড়ে ১১৭ টাকায় ঠেকেছে। এ হিসাবে ৩১ টাকা ৫০ পয়সা বেড়েছে ডলারের দাম, টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। 

এদিকে বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ডের দর ছিল ১১৫ টাকা।  বৃহস্পতিবার বছরের শেষ লেনদেনের দিনে এ দর দাড়ায় ১২৮ টাকায়। এভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক মুদ্রা ইউরোর দাম ৯৭ টাকা থেকে ১১৩ টাকা,ভারতীয় রুপি ১ টাকা ১৫ পয়সা থেকে ১ টাকা ৩৩ পয়সা, সৌদি রিয়াল ২২ টাকা থেকে ২৮ টাকা, কানাডিয়ান ডলার ৬৭ টাকা থেকে ৮০ টাকা হয়েছে বেড়ে। তবে ডলারের বিপরীতে ইউরো, পাউন্ড, ভারতীয় রুপির দাম কমার তুলনায় টাকার মান কম হারে কমেছে। 

 

এমকে

 

 


মন্তব্য
জেলার খবর