দেশে যারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে জনভোগান্তি বাড়ায়, তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে সরকারকে কঠোর হতে বললেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বলেছেন, কারসাজি করে কেউ যেন পণ্য মূল্য বাড়াতে না পারে, সেজন্য সরকারকে আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য নিজেদের সুনাম যেন ক্ষুন্ন না হয়, সে ব্যাপারে গোটা ব্যবসায়ী সমাজকে সজাগ থাকতে আর সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।
বৃহস্পতিবার ( ৭ এপ্রিল ) জাতীয় রফতানি ট্রফি প্রদান অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। রাজধানী ঢাকার হোটেল রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে এ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি তার সরকারি বাসভবন বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।
রাষ্ট্রপতি জানান, যে কোনো সেক্টরে পণ্যের দাম বাড়লে বা কমলে সিন্ডিকেটকেই দায়ী করা হয়। তাই পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, মজুত ও ঘাটতির সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে আগাম পরিকল্পনা নেওয়া গেলেই অসাধু ব্যবসায়ীরা কোনো সুযোগ নিতে পারবে না।
দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাজার অর্থনীতিতে দ্রব্যমূল্য নির্ধারিত হয়। কিন্তু এ দেশে চাহিদা সরবরাহের সমন্বয়হীনতা নয়, বরং কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়।
উষ্মা প্রকাশ করে আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশে জাতীয়, ধর্মীয় ও সামাজিকসহ বিভিন্ন উৎসব পার্বণ পণ্যের দাম কমানো হয়, যাতে জনসাধারণ পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দের সাথে উৎসবে শরিক হতে পারে। অথচ বাংলাদেশে দেখা যায় এর বিপরীত চিত্র। উৎসব এলেই দেখা যায়, একশ্রেণির ছোটো-বড়ো ব্যবসায়ী এটাকে পুঁজি করে কীভাবে জনগণের পকেট কাটা যায়- সেজন্য ওঁৎ পেতে থাকেন।
ব্যবসা করা সরকারের কাজ নয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকারের কাজ হচ্ছে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা। আর সরকার সে কাজটাই করছে। সরকার কখনো ব্যবসায়ীদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। কিন্তু যখন অতি মুনাফার লোভে জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয়, তখন বাধ্য হয়েই সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।
একজন ব্যবসায়ী, উৎপাদনকারী, বিনিয়োগকারী বা রফতানিকারকের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, জনসাধারণের ভোগান্তির কথা বিবেচনা না করে আপনাদের শুধু নিজেদের মুনাফার কথা ভাবলে চলবে না। ভোক্তারা প্রত্যাশা করে আপনারা যৌক্তিক মুনাফা করুন, জনগণ যাতে আপনাদের অতি মুনাফার শিকার না হয়। তাই রাতারাতি বড়লোক হওয়ার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। ব্যবসার প্রতিটি কাজে সততা ও নিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আরও বক্তব্য দেন— বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রফতানি ট্রফি অর্জনকারী জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম রফিকুল ইসলাম নোমান।
এমকে