ভ্যান চালিয়ে পড়াশোনা, জিপিএ-৫ পেলেন রমজান

১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও)  প্রতিনিধি:

৩ বছর বয়সে বাবাকে হারায় রমজান আলী। এ সময় চার সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তার মা মনোয়ারা বেগম। সন্তানদের ভরণপোষণ জোগাতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয় তাকে। সংসারে টানপোড়ন দুর করতে তাই ছোটবেলা থেকেই মায়ের সঙ্গে মানুষের বাসায় কাজ করার পাশাপাশি চালিয়ে গেছেন নিজের পড়াশোনা। পরীক্ষার আগে ও পরীক্ষা চলাকালীন বন্ধের দিনগুলোতে চালিয়েছেন ভ্যান। আর্থিক টানপোড়েন কখনোই দমাতে পারেনি রমজানকে। একে একে শিক্ষার প্রতিটি ধাপ কৃতিত্বের সঙ্গেই পার করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পেয়েছেন জিপিএ-৫।

রমজান আলী ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার মীরডাঙ্গী গ্রামের মৃত আবু তাহেরের ছেলে। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।এখন কাজ করেন গার্মেন্টসে।  স্থানীয় মীরডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৪.১১ পাওয়া রমজান এইচএসসির এমন ফলাফলে নতুন স্বপ্ন দেখছেন।

রমজান আলী বলেন, ‘স্বপ্ন ছিল ভালো ফলাফল করে একটি মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবো। আজকে একটা মনের আশা পূরণ হলো। ফলাফলের দিনে গার্মেন্টস থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় এসেছি। রেজাল্ট শুনে সব কষ্ট ভুলে গেছি। আমার মা অনেক খুশি হয়েছেন। এখন ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনাটা শেষ করে ভালো একটা চাকরি করে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই।’ এক সময় অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা আয় হতো তা থেকে কিছু টাকা দিয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতাম। এসএসসির আগের পড়াশোনার খরচ চালাতে খুব বেশি কষ্ট না হলেও পরে হিমশিম খেতে হয়েছে। লাজ ভুলে ভ্যান চালানো শুরু করি, বলেন রমজান।

রমজানের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘রমজানের বাবা মারা যাওয়ার পর ৪ ছেলে-মেয়ে নিয়ে বহু কষ্টে জীবন চালিয়েছি। এক পর্যায়ে মানুষের বাসায় কাজ শুরু করি আমি ও রমজান। কাজ করেই রমজান পড়াশোনা করতো। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া সম্ভব হতো না। বন্ধুদের বাসায় শুনে এসে রাতে পড়াশোনা করত। সকালে আবার কাজে যেত। তিনি বলেন, একপর্যায়ে আর না পেরে ভ্যান চালানো শুরু করে। এত কষ্ট করে আমার ছেলে পড়াশোনা করে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এখন   পড়াশোনা কীভাবে চালাবে, সে চিন্তায় আছি।

রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক আহসান হাবিব বলেন, ‘সে মাসে একদিন বা দু’দিন কলেজে আসত। তার সংগ্রামের কথা সবাই জানি। অনেক কষ্ট করে সে ভালো ফলাফল করেছে। তার ফলাফলে আমরা অনেক খুশি। আমরা তার পাশে আগেও ছিলাম, আগামীতেও থাকব ইনশাআল্লাহ্।

রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন- বিষয়টি যেমনিভাবে কষ্টের, তেমনি অনুপ্রেরণার। পড়াশোনার ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কোনো উপায়ে তা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। রমজান তাই প্রমাণ করেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।

 

মো. লাতিফুর রহমান লিমন/এমকে

 


মন্তব্য
জেলার খবর