মাশরাফি বিন মর্তুজার কারিশমাটিক নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছিল সিলেট স্টাইকার্স। পুরো ম্যাচজুড়ে দাপটের সাথে খেলেছে দলটি। তাই ভেবেই নেওয়া হয়েছিল এবার শিরোপা ঘরে তুলবে দলটি। কিন্তু শেষ হাসিটা কুমিল্লাই হাসল। মাশরাফিদের স্বপ্ন ভঙ্গ করে চতুর্থবারের মতো শিরোপা নিজেদের করে নিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বৃহস্পতিবার বিপিএলের ফাইনালে সিলেটকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৭ উইকেটে ১৭৫ রান তোলে সিলেট । ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৭৪ রান করেন মুশফিকুর রহিম। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় কুমিল্লা।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ঝড়ো সূচনা করে কুমিল্লা। প্রথম দু’ওভারে ২২ রান তোলে। তবে ৩য় ওভার কুমিল্লার রানের গতি থামান রুবেল। ক্যারিবিয়ান তারকা সুনীল নারিককে ফেরান ১০ রানে। তিনে নামা ইমরুলকে বিদায় করেন জর্জ লিন্ডে। ৩৪ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় কুমিল্লা।
প্রথম সারীর দুই ব্যাটার বিদায় হলেও ক্রিজের এক প্রান্ত আগলে ছিলেন লিটন দাস। ৩৯ বলে ৫৫ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে কুমিল্লাকে ম্যাচে ফেরান তিনি। তবে মাশরাফি বোলিং দিয়ে থামানোর চেষ্টা করেন মাশরাফি। দুই বিদেশি তারকা মঈন ও জনসন উইকেটে থাকার পরও মাশরাফীদের দারুণ ফিল্ডিং পাল্টে দেয় গতিপথ।
শেষ ৪ ওভারে কঠিন সমীকরণের মুখে দাঁড়ায় কুমিল্লা। ২৪ বলে তখন প্রয়োজন ৫২ রানের। কিন্তু উইকেটে থাকা মঈন ও জনসনকে আটকাতে পারেনি সিলেট। দুই বিদেশি তারকাদের ব্যাটে চড়ে কঠিন সমীকরণ সহজেই পাড়ি দেয় কুমিল্লা। ১৯.২ ওভারে তুলে নেয় স্বস্তির জয়। ব্যাট হাতে ১৭ বলে ২৫ রান করেন মঈন। আর জনসন উপহার দেন ৫২ বলে ৭৯ রানের ইনিংস।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে সিলেট। মারমুখী ব্যাট চালাতে থাকেন তারা। আন্দ্রে রাসেলের প্রথম ওভারেই আসে ১৮ রান। এমন দুর্দান্ত শুরুটা অবশ্য ধরে রাখতে পারেনি সিলেট। ঠিক পরের ওভারের প্রথম বলেই আউট হন তৌহিদ হৃদয়। ছন্দে থাকা তৌহিদ এদিন রানের খাতাও খুলতে পারেননি।
আগের ম্যাচের মতো আজও ওয়ানডাউনে মাঠে নামেন অধিনায়ক মাশরাফী। কিন্তু টিকতে পারেননি। রাসেলের প্রথম স্পেলের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরেন মাশরাফী। দলীয় ২৬ রানে দুই উইকেট হারিয়ে শুরুতে ব্যাকফুটে চলে যায় সিলেট।
সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। শুরুর ধাক্কা সামলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজন মিলে গড়েন ৭৯ রানের জুটি। এর মধ্যে পাওয়ার প্লেতে আসে ৪২ রান। আর ৩৮ বলে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত।
পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর শান্ত যখন আরও আগ্রাসী হচ্ছিলেন, তখন তার ঝড় থামালেন মঈন আলি। ইংলিশ তারকার বল উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে আউট হন শান্ত। ৯ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৪৫ বলে ৬৪ রানে শেষ হয় তার প্রতিরোধ।
শান্তর পর থিতু হওয়ার চেষ্টায় ফেরেন রায়ার্ন বার্ল। মুস্তাফিজের কাটারে পড়ে ১৩ রানে বিদায় নেন তিনি। বার্লের পর একে একে ফেরেন থিসারা পেরেরা-জর্জ লিন্ডে। কিন্তু উইকেটে ততক্ষণে থিতু হয়ে যান মুশফিক। ৩৬ বলে হাফসেঞ্চুরি করা মুশফিক শেষ পর্যন্ত ৭৪ রানে অপরাজিত ইনিংস খেলেন। ৪৮ বলে তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায়। মুশফিকের ব্যাটে চড়ে শেষ পর্যন্ত ভালো পুঁজি পায় সিলেট স্ট্রাইকার্স।
যদিও মাঝে কুমিল্লার ক্যাচ মিস সুযোগ করে দিয়েছে সিলেটকে। এক ইনিংসে কুমিল্লা মিস করে পাঁচটি ক্যাচ। লিটন দাস ও মঈন আলিদের ক্যাচ মিসের কারণে সিলেট পায় বড় সংগ্রহ।
বল হাতে কুমিল্লার হয়ে ৩১ রানে দুই উইকেট নেন মুস্তাফিজ। একটি করে নেন রাসেল, মঈন আলি, তানভির ও নারিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
সিলেট স্ট্রাইকার্স : ২০ ওভারে ১৭৫/৭ (শান্ত ৬৪, তৌহিদ হৃদয় ০, মাশরাফী ১, মুশফিক ৭৪, পেরেরা ০, বার্ল ১৩, জর্জ ৯, জাকির ১, সাকিব ০; মঈন ৪-০-৩১-১, রাসেল ৩-০-৩১-১, মুস্তাফিজ ৪-০-৩১-২, তানভির ৩-০-২১-১, নারিন ৪-০-৩৩-১)।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ১৯.২ ওভারে ১৭৬/৩ ( লিটন ৫৫, নারিন ১০, ইমরুল ২, জনসন ৭৯ , মঈন ২৫; রুবেল ৪-০-৩৯-২, তানজিম ৪-০-৫০-০, জর্জ ৪-১-১৪-১, উড , পেরেরা ১-০-১২-০, বার্ল ২-০-১৮-০)।
ফল : ৭ উইকেটে জয়ী হয়ে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।