৫শ’ ডুবন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছেন ডুবুরি আব্দুর রাজ্জাক

মো.মানিক হোসেন, রাজশাহী
২৫ জুলাই ২০২৩

ডুবুরি হিসেবে কাজ করার ২০বছরে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ৫শ’ জনের মরদেহ ডুবন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন  আব্দুররাজ্জাক।তিনি এখন রাজশাহীসদরফায়ারসার্ভিসেরডুবুরিপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এক সাক্ষাতকারে আব্দুর রাজ্জাক ডুবুরি হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞাত বাংলাদেশ টুয়েন্টি ফোর অনলাইন- এর সঙ্গে শেয়ার করেন সম্প্রতি।

 

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এটা সেবাধর্মী চাকরি। মানুষের উপকার করতে পারলে আমার কাছে অনেক ভাললাগে।  তিনি জানান, নিজেদের স্বজনরা নদী বা পুকুরে নিখোঁজ হলে আমাদের খবর দেয় মানুষ। আমরা উদ্ধার করি। অনেক সময় পানিতে নিখোঁজ মানুষকে উদ্ধারে যেতে ভয় পায় মানুষ। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা তেমন না। পানির নিচে ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই। আমার চোখে কোন দিন তেমন কিছু পড়েনি। পানির নিচে আক্রমন করা মতো কিছু নেই। 

 

ডুবুরি হিসেবে আব্দুর রাজ্জাকের প্রথম অভিযান ছিল খুলনায় কীর্তনখোলা নদীতে। সেখানে ১৫০ জন লোক নিয়ে একটি জাহাজ ডুবে যায়। এ দুর্ঘটনায় ৪৫ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

 

পানির গভীরতা প্রসঙ্গে আব্দুর রাজ্জাক জানান,  ডুবুরিদের কাছে গভীরতা বড় বিষয় না। মূল বিষয় হচ্ছে পানির স্রোত। বেশি স্রোত হলে ডুবুরিদের কাজ করতে সমস্যা হয়। তারপরেও লব্ধ উন্নৎমানের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পানির তলদেশে কাজ করা হয়।

 

পানির পরিবেশ সম্পর্কে তিনি জানান, একজন সাধারণ মানুষের মতোই পানির নিচে দেখতে ডুবুরিরা। এখানে বেশি দেখার কোন সুযোগ নাই। স্বচ্ছ পানি ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। তবে পানি ঘোলা হলে সাবধানতা অবলম্বন করে কাজ চালিয়ে যেতে হয়।  

 

নওগাঁ জেলা সদরের হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক চাকরিতে ২০০৩ সালে যোগদান করেন। খুলনা বিভাগে ২০১০ সাল পর্যন্ত ডুবুরি পদে নিয়োজিত ছিলেন। এরপরে তাকে রাজশাহীতে বদলি করা হয়।

 

উদ্ধার অভিযানে শনাক্তের বিষয়ে ডুবুরি বলেন, আমরা পানির নিচে সার্চ করে থাকি। সেটি কয়েকভাবে। লাইন সার্চ, গোল আকারের সার্চ। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছাড়াও অনেক সময় পানির তলদেশে মাটিতে সুয়ে সার্চ করা হয়।

 

 

আব্দুর রাজ্জাকের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী। তিনি জানান, নদীর ধারে আমার বেড়ে ওঠা। সাঁতার জানতাম। আর পানি সম্পর্কে আমার যথেষ্ট ভালো ধারণা ছিল। তাই এই চাকরিটা আমার কাছে খুব সহজ মনে হয়েছে।

 

ফায়ার সার্ভিসে ডুবুরি পদে কীভাবে এলেন,এ প্রসঙ্গে আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে বলেন, ‘আমার ভাই পুলিশের চাকরি করেন। তিনি রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ছিলেন। সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার ভাইয়ের কলিগের ছোট ভাই ফায়ার সার্ভিসে চাকরির জন্য এসেছিলেন। এ সময় আমাকে বলেন, আপনি একটু চলেন আমার সাথে- আজ ফায়ার সার্ভিসে লোক নিয়োগ দেবে। আমি বললাম-ফাঁকা আছি। তাহলে চলো দুই জনে বেড়িয়ে আসি। তারপরে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, ডুবুরির জন্য লোক নিবেন। তাই সাঁতার দিতে হবে।

 

আব্দুর রাজ্জাক স্মৃতি হাতড়ে বলেন, আমি চিন্তা করলাম, এখানে প্রার্থী হতে কোন কাগজপত্র লাগবে কি না। কথা ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজনকেও জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তাঁরা জানিয়েছিল, আপাতত কোন কাগজপত্র লাগবে না। যদি প্রথম, দ্বিতীয় তৃতীয় হন- সেই ক্ষেত্রে  কাগজপত্রের জন্য সময় দেওয়া হবে। তারপরে সাঁতার দেওয়া জন্য মানসিকভাবে প্রস্তিুত নিলাম। চাকরি পাওয়া দিনের কথা মনে করে এ ডুবুরি আরো বলেন, এরপরে প্রতিটি গ্রুপে ১০ জন করে সাঁতার দেন। ১০ জনের ওই গ্রুপে নওগাঁ জেলা থেকে আমি প্রথম হয়েছিলাম। তারপরে পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষাও ভালো হয়েছিল। তাই চাকরি জুটলো। 

 

 

রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুর রউফ বলেন, রাজশাহীতে ছয়জন ডুবুরি আর একজন লিডার। তারা রাজশাহী বিভাগের সব জেলায় উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। আমাদের ডুবুরিরা অনেক দক্ষ।

 

বিডি/সি/এমকে

 


মন্তব্য
জেলার খবর