প্রতিদিন নানা জায়গায় নানা মানুষের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়। সৌজন্যমূলক
কথাবার্তা হয়, আবার ভাবের আদান-প্রদানও হয়। কিন্তু এরই মাঝে কিছু না বুঝে জানতে চাওয়া
কিছু প্রশ্ন আপনাদের সাক্ষাতের অভিজ্ঞতাকে একেবারেই বিষাদে পরিণত করতে পারে। কথা প্রসঙ্গে
কিংবা বিনা প্রসঙ্গেই জানতে চাওয়া প্রশ্নটি আপনাকে হয়তো সামনের মানুষটির সামনে অভদ্র
বা অবিবেচক হিসেবে প্রমাণ করছে। আবার অনেক প্রশ্ন বিব্রতকর পরিস্থিতিও সৃষ্টি করে।
তাই জেনে নিন বিবেকসম্পন্ন মানুষ হিসেবে আপনাকে কথা বলার সময় কোন প্রসঙ্গ বা প্রশ্নগুলো
এড়িয়ে চলা উচিত, এমনকি আপনি যদি আত্মীয়ও হন।
বিয়ে করছেন কবে?
একটা নির্দিষ্ট বয়সে বিয়ে করাটা সমাজের প্রচলিত রীতি হলেও সবাই যে একই ধাঁচে
চলবে, তা কিন্তু নয়। পরিচিত কেউ বিয়ে করলে আপনি তা সময়মতো জানতেই পারবেন। এ নিয়ে বাড়তি
উৎসাহ দেখানোটা অভদ্রতা। কে কখন বিয়ে করবেন, আদৌ করবেন কি না, এসব প্রশ্নের মাধ্যমে
আপনি কিন্তু নিজেকেই খুব একটা বিবেক সম্পন্ন মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করছেন না। অবিবাহিত
নারীকেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তিনি উচ্চশিক্ষিত হলে তার
শিক্ষার প্রতি নেতিবাচক ইঙ্গিতও করা হয়ে থাকে। অবিবাহিত নারীর মা-বাবাও রেহাই পান না
এসব থেকে। এসব প্রশ্ন এবং বাক্য কোনোটাই সুরুচির পরিচায়ক নয়।
বাচ্চা নিচ্ছেন কবে?
বিয়ের পর কোন দম্পতি কখন সন্তান নেবেন, এটা একান্ত তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
আবার পরিকল্পনা করলেও কবে মা-বাবা হবেন, তা কিন্তু নির্দিষ্টভাবে কেউ জানেন না। শারীরিক
অসুবিধার কারণে অনেক দম্পতি চিকিৎসাধীনও থাকেন। এসব উটকো প্রশ্ন তাদের জন্য এক ধরনের
মানসিক আঘাত।
সংসার করতে পারলে না?
বিবাহবিচ্ছেদ বিবাহের মতোই একটি সামাজিক প্রক্রিয়া। কিন্তু বিষয়টি সহজভাবে
না মেনে কাউকে ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্নের মাধ্যমে আঘাত করা একেবারের সভ্য আচরণ নয়। পুনরায়
বিয়ে করার জন্য চাপ দেওয়াও ঠিক না। এগুলো সবই ব্যক্তিগত বিষয়।
বেতন কত কিংবা চাকরি ছাড়লে কেন?
নানা কারণে মানুষ চাকরি ছাড়েন। এ নিয়ে প্রশ্ন করার কিছু নেই। নতুন চাকরিতে
তিনি বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন কি না, এ নিয়ে অতিরিক্ত উৎসাহ দেখানোও অনুচিত। তবে নিজের
বা আপনজনের ওই ধরনের চাকরির ইচ্ছা থাকলে বিস্তারিত জিজ্ঞেস করাটা দোষের কিছু না। সেক্ষেত্রে
আপনি এত প্রশ্ন কেন করছেন, তা আগেই জানিয়ে রাখুন। তাহলে যাঁকে প্রশ্ন করছেন, তিনি আর
বিব্রত হবেন না। এদিকে যে যেই পেশায় আনন্দে আছে তাকে সেই পেশা নিয়ে তাচ্ছিল্যভরা মন্তব্য
করাও উচিত না। কেউ হয়তো শখের জিনিস কিনতে ভালোবাসেন, কেউ মানুষকে কিংবা কোনো প্রাণীকে
খাওয়াতে ভালোবাসেন। এসবের পয়সা কোথা থেকে আসছে, তা জানতে চাওয়া কিন্তু রীতিমতো অভদ্রতা।
আপনারা এক সাথে থাকেন না?
সন্তানের বিয়ের পর তিনি মা-বাবার সঙ্গে না থাকলেই যে তাদের অবহেলা করছেন,
এমন ভাবাটা ভুল। মা-বাবা বা শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকা না–থাকাটা তাদের পারিবারিক বিষয়।
অনেক ক্ষেত্রে শহুরে জীবনযাপনে অনভ্যস্ত মা-বাবা সন্তানের থেকে দূরে, নিজের গ্রামে
থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আবার সন্তান দেশের বাইরে চলে গেলেই যে মা-বাবাকে ‘ফেলে’
চলে গেলেন, সেই ভাবনাও ঠিক নয়।
স্বাস্থ্যের একি অবস্থা?
এত শুকিয়ে যাচ্ছ কেন?, খাও না কিছু?, কোন গুদামের চাল খাও?, এত মোটা হলে
কিভাবে? স্বাস্থ্য নিয়ে করা এই সব প্রশ্নই কিন্তু অভদ্রতার পরিচয় দেয়। কারো শারীরিক
গঠন নিয়ে তাচ্ছিল্যভরা মন্তব্য করে কাউকে বিব্রত করা উচিত নয়।