চাল থেকে ঝুড়ি, স্বচ্ছলতা ফেরানোর সংগ্রাম কিশোর আ.আলিমের

সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ, গুরুদাসপুর(নাটোর)..
৩০ জুলাই ২০২৩

আব্দুল আলিমের বয়স ১৩ বছর। পিতা রাশিদুল ভ্যান চালক, অসুস্থতার কারনে তার রোজগারে সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। তাই আব্দুল আলিমকে ধরতে হয়েছে সংসারের হাল।

‘হালের’ গতি সঞ্চারণে পাশের মহিষমারী গ্রামে ঝুড়ি তৈরির যন্ত্র দেখে ধারদেনা করে ছেলেকে একটি যন্ত্র কিনে দিয়েছেন রাশিদুল। ভ্রাম্যমাণ এ যন্ত্রে চাল দিলে বের হয় সুস্বাদু মুখরোচক ঝুড়ি। ঝুড়ি তৈরির যন্ত্রের চাকায় ঘুরছে রাশিদুলের সংসারের চাকাও।

আলিম গুরুদাসপুর উপজেলার সীমন্তবর্তী বিলদহর গ্রামের বাসিন্দা। সম্প্রতি তাকে গুরুদাসপুর পৌর সদরের আনন্দ নগর মহল্লায় তাকে চাল থেকে ঝুড়ি তৈরি করতে দেখা যায়। মহল্লার বউ-ঝিয়েরা নাস্তার জন্য  ঝুড়ি তৈরি করে নিচ্ছেন নিজেদের সামর্থ্য ও চাহিদা অনুযাযী।

আব্দুল আলিম জানায়,কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই সরাসরি সেদ্ধ চাল এ যন্ত্রের মধ্যে ঢেলে দিলেই বের হয়ে আসে মুখরোচক ঝুড়ি। ঝুড়িতে বাড়তি স্বাদযুক্ত করতে চালের সাথে চিনিযুক্ত করলে বের হয় মিষ্টি ঝুড়ি। আর মরিচের গুড়া,পরিমাণ মতো লবণ আর সরিষার তেল মিশিয়ে নিলে বের হচ্ছে ঝাল ঝুড়ি। ঝাল কিংবা মিষ্টি- যাই হোক না কেন প্রতিকেজি ঝুড়ি তৈরিতে মজুরি ৪০ টাকা। ১ কেজি চালের ঝুড়ি তৈরির জন্য সময় লাগে ৫-৭ মিনিট।

তিনি জানান, এ কাজে খরচসহ প্রতিদিন গড়ে আয় হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে জ্বালানি (ডিজেল) অন্যান্য মিলে ৫০০ টাকা খরচ হয়।

প্রথমে হাত মাইকের সাহায্যে ঝুড়ি তৈরিতে আকৃষ্ট করা হয় গৃহিনীদের। একত্রে বেশ জন জড়ো হলে যন্ত্র চালু করা হয়। শেষ হলে নতুন স্থানে গিয়ে একইভাবে আকৃষ্ট করা হয় ঝুড়ি তৈরিতে, বলেন আব্দুল আলিম।

কিশোরেই সংসারের খরচ যোগানে আব্দুল আলিম আরও জানায়, বছরখানেক আগে ৯০ হাজার টাকায় কুষ্টিয়া থেকে যন্ত্রটি কেনা হয়। একা সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য। তাই মামাতো ভাইকে (শিশু) সঙ্গে নিয়ে এসেছে।

পরিবারের অবস্থা সম্পর্কে আব্দুল আলিম জানায়, তারা দুই ভাই। ট্রাক ড্রাইভারের সহকারি বড়ভাই আলিফ (২৪) বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। অসুস্থ পিতার সংসারে বাড়তি আয় যোগান দিতে এ পথ বেছে নিয়েছেন তিনি।

আনন্দ নগর মহল্লার গৃহিনী মারজান খাতুন জানান,সবসময় বাচ্চাদের জন্য নাস্তা তৈরি করা সম্ভব হয়না। নাস্তার ঝামেলা এড়াতেই ঝুড়ি তৈরি করে নেওয়া। বাচ্চা ছাড়াও বাড়ির সব বয়সী মানুষের পছন্দ ঝুড়ি। দেখে-শুনে কোনো রকম রাসায়নিক পণ্যের ব্যবহার ছাড়াই স্বাস্থ্যকর পরিবেশে ঝুড়ি তৈরি করে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করছি না।

গুরুদাসপুর রোজী মোজাম্মেল অনার্স কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মাজেম আলী মলিন জানান, এক সময় গায়ের মায়েরা চাল থেকে কয়েক ধাপে হাতে ঝুড়ি তৈরি করতেন। সেটা ছিলো সময় কষ্টসাধ্য। প্রযুক্তি অনেক কিছুই পাল্টে দিয়েছে। যন্ত্রের সাহায্যে ঝুড়ি তৈরীতে সময় ঝামেলা দুটোই কমেছে। আবার অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

 

বিডি/সি/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর