একই ঘরে গরুর সঙ্গে ভিক্ষুক দম্পতির বসবাস!

রাশেদুল ইসলাম,নীলফামারী
১৭ অগাস্ট ২০২৩

ঝুপড়ি ঘরের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে একগাদা গোবর। পাশেই দাঁড়িয়ে দুইটি গরু। গরু গোবর পেরিয়ে সামনে এগুতেই দেখা যায় স্যাঁতসেঁতে মাটিতে বসে চুলা জ্বালিয়ে রান্না করছেন এক মহিলা।

মাত্র হাত চওড়া আর হাত লম্বা জায়গাতেই একটা খুটা (বাঁশের মাচা), একটা নড়বড়ে টেবিল, চুলা, হাড়ি পাতিল, থালাবাসন, মরচে ধরা একটা ট্রাংক আর দড়িতে ঝুলানো কিছু কাপড়-চোপড়। এনিয়েই ভিক্ষুক দম্পতি সোলেমান মৃধা ও তার বাক প্রতিবন্ধী স্ত্রী মাহমুদা বেগমের ছোট সংসার। দীর্ঘ বছর ধরে এমন মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।

 

সোলেমান মৃধার বসবাস নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার গেট বাজারের উত্তরপ্রান্তে পৌরসভার পাবলিক টয়লেট সংলগ্ন এলাকায়। মানববেতর এ জীবনযাপন থেকে মুক্তির জন্য সোলেমান মৃধা অবশ্য ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যে জোটেনি।

তার কথায়, ‘ আমার মত অনেক গৃহহীন মানুষ আশ্রয়ণের ঘর পেয়েছে। আমিও সেই আশাতেই পর পর চার বার আবেদন করেছি। কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, ইউএনও এর কাছে ধর্ণা দিয়েও মেলেনি ঘর।‘

সম্প্রতি তার ঝুপড়ি ঘরে যাওয়ার পরপরই ভ্রু কুঁচকে নাক চেপে ধরা দেখে সোলেমান মৃধা  তাচ্ছিল্যের  হাসি দিয়ে বলেন, এমন অস্বস্তিকর পরিবেশে সামান্য কয়েক মিনিটেই আপনাদের দম আটকানোর মতো। অথচ আমরা দুইটা মানুষ বছরের পর বছর ধরে এখানে থাকছি। শীতে ভাঙা বেড়া দিয়ে ঠান্ডা ঢোকে আর বর্ষায় চালের টিনের ফুটা দিয়ে ধর ধর পানি পড়ে। মেঝে, বিছানা পানিতে একাকার হয়ে গরুর গবর কাদায় মাখামাখি করে কাটে দিনরাত।  সারাদিন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ক্লান্ত দেহ নিয়ে ঘরে এসেও এতটুকু স্বস্তি পাই না আমরা। মুরগী ব্যবসায়ী কাশেম ভাই দয়া করে এটুকু জায়গা দিয়েছে বলে মাথা গোজার সুযোগ হয়েছে। নয়তো অনেকদিন রেলস্টেশনের প্লাটফরমেই কেটেছে। কাশেম ভাইয়ের বাইরে আমাদের এ দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসেনি কেউ।

বাবা প্রসঙ্গ উঠতেই সোলেমান মৃধা  অশ্রু ভেজা নয়নে বলেন, আমার বাবা আব্দুল জব্বার মৃধা স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হন। তার আগে তিনি ফরিদপুর জেলা থেকে সৈয়দপুর আসেন। সে সূত্রেই এখানে বসবার আমার। কালের পরিক্রমায় সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছি প্রায় দুই যুগ হচ্ছে।

তার চাওয়া প্রসঙ্গে কথা তুলতেই বলেন, শেষ বয়সে এসে আর পারছি না। প্রধানমন্ত্রী যদি দয়া করে আমার মতো অসহায়, দুস্থ, নিরীহ এবং আমার স্ত্রীর মতো প্রতিবন্ধীর জন্য একটা ঘর বরাদ্দ দেন, তাহলে শহীদের সন্তান হয়ে জীবনের বাকি দিনগুলো আপন নীড়ে থাকার ভাগ্য হয়।

সৈয়দপুর পৌরসভার ১৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মঞ্জুর আলম বলেন, সোলেমান মৃধা অত্যন্ত কষ্ট করে অন্যের ঘরে থাকেন। ভিক্ষা করে সংসার চালান। তার স্ত্রী প্রতিবন্ধী। অত্যন্ত মানবেতর অবস্থায় আছেন। আমার সুপারিশ নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের জন্য অনেকবার আবেদন করেছেন। কিন্তু আজও তার ভাগ্যে জুটেনি। এটা খুবই দুঃখজনক।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল রায়হান বলেন, সোলেমান মৃধা তার স্ত্রী সম্পর্কে আমার জানা নাই। এমন কেউ আবেদন নিয়ে বা এমনিতেও আমার কাছে আসেনি। তাদেরকে অবশ্যই আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন। সার্বিক ভাবে সহযোগিতাসহ যে কোন আশ্রয়ণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে তাদের।

 

বিডি/সি/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর