মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ অগাস্ট ২০২৩

দেশে সব ধরণের পণ্যের দাম এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে কমেছে টাকার মান। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সংসারে নিত্যপণ্যের যোগান স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বল্প মধ্য আয়ের মানুষ। কবে নাগাদ এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ ঘটবে, সেটা কেউ বলতে পারছে না।

একদিকে মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে কিছু সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীর কারসাজিতে কিছু পণ্যের দাম হুট করে লাফিয়ে বাড়ছে, পক্ষান্তরে কমছে যৎসামান্য তাও ধীর গতিতে। এ কারসাজি পরিস্থিতিকে দুর্বিসহ করে তুলছে। মাঠে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর রয়েছে। তারপরও দাম চড়া থাকায় ভোক্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।  

দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রার আয় দিয়ে ব্যয় মেটানো যাচ্ছে না। স্থগিত রাখা বৈদেশিক ঋণ সুদ পরিশোধের ক্ষেত্রে রিজার্ভ থেকে ডলার দিতে হচ্ছে। ফলে রিজার্ভেও পড়ছে টান। দায় মিটিয়ে অতিরিক্ত ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে না থাকায় রিজার্ভে ডলার যোগ হচ্ছে না। এতে ক্রমেই রিজার্ভে চাপ বাড়ায় টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ছে।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বর্তমানে গড়ে প্রতি মাসে দেশে রেমিট্যান্স রপ্তানি আয় হচ্ছে ৬৫৬ কোটি ডলার। বিপরীতে আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে ৫৫০ কোটি ডলার। বাড়তি থাকা ১০৬ কোটি ডলার দিয়ে বৈদেশিক ঋণ সুদ পুরোটা পরিশোধ হচ্ছে না। ঘাটতি থাকছে ৫১ কোটি ডলার। এছাড়া বিদেশ ভ্রমণ, চিকিৎসা ব্যয়, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, বিদেশি কোম্পানির অর্জিত মুনাফা রয়্যালটি বাবদ আরও অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়ছে। গত অর্থবছরে ঘাটতি হয়েছে ৩৩৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে রিজার্ভ থেকে হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গেল জুলাইয়ে বিক্রি করেছে ১১৪ কোটি ডলার।

এদিকে রপ্তানির মোট আয় দিয়ে ৬০ শতাংশ আমদানি ব্যয় মেটানো যায়। বাকি ৪০ শতাংশ মেটানো হয় রেমিট্যান্স থেকে। কিন্তু গত বছর থেকে রপ্তানি আয় রেমিট্যান্স দিয়ে মেটানো যাচ্ছিল না আমদানি ব্যয়। তাই রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় আমদানি ব্যয় রেমিট্যান্স রপ্তানির ডলার দিয়েই মেটানো যাচ্ছে। কিন্তু আমদানির বকেয়া দেনা স্থগিত বৈদেশিক ঋণ শোধ করা যাচ্ছে না, ডলার দিতে হচ্ছে রিজার্ভ থেকে। এ কারণে কমে যাচ্ছে রিজার্ভ।

ওদিকে করোনার পর ২০২১ সালে ৫৩ শতাংশ বাড়ে আমদানি ব্যয়। পরের বছর বৈশ্বিক মন্দার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম দেশীয় বাজারে ডলারের দাম বৃদ্ধি পায়। সে সময় আমদানি ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার পরও এ খাতে ২৩ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি পায়। তবে ব্যয় বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি রপ্তানি রেমিট্যান্স। ফলে ঘাটতি দেখা দেয় ডলারের প্রবাহে।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডলার দাম ৮২ টাকা ৯০ পয়সা থাকলেও চলমান আগস্টে এসে দাঁড়িয়েছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায়।  মাঝে অবশ্য ২০২১ সাল পর্যন্ত দাম স্থিতিশীলই ছিল। কিন্তু ২০২২ সালে অস্থির হয়ে যায়। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মধ্যে ২০২০ সালে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি গড়ে ১৮ শতাংশ থাকলেও ২০২১ সালে দেড় ২০২২ সালে সাড়ে শতাংশ কমেছে। গত অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়েছে সাড়ে শতাংশ। আমদানি ব্যয় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় ৭৪০ কোটি ডলারে। নিয়ন্ত্রণ করার পরও ২০২২ সালে এ খাতে ব্যয় হয় ৫২০ কোটি ডলার। গেল জুনে আমদানি ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার।

২০০৭ সাল থেকে বাড়তে থাকা রিজার্ভ মাঝে মধ্যে কমলেও  কখনো চিন্তার কারণ হয়নি। কিন্তু এবার বড় শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে দেশে রিজার্ভ  ছিল হাজার ৬২০ কোটি ডলার, এ ডলারে ৬ মাসের আমদানির ব্যয় মেটানো যেত তখন। কিন্তু ২০২২ সালে কমে হাজার ৩৭০ কোটি ডলারে নামে রিজার্ভ। এ ডলার সাড়ে মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান। সেখান থেকে কমে এখন নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে হাজার ৩১৪ কোটি ডলার। এ রিজার্ভ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত মাসের কম আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে বলে জানা গেছে।

 

বিডি/ই/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর