ঘুরে আসতে পারেন কুসুম্বা মসজিদ, দেখলে ভালো লাগবে

আবু ইউসুফ, নওগাঁ প্রতিনিধি
২০ অগাস্ট ২০২৩

কালো ধূসর রঙের পাথর আর পোড়ামাটির ইটে গড়া, অসাধারণ কারুকার্য খচিত মনোমুগ্ধকর ‘কুসুম্বা মসজিদ’- এর বসয় প্রায় সাড়ে ৪০০ বছর। কিন্তু দেখলে সেটা বুঝার উপায় নেই এতো পুরাতন। মসজিদের অন্দর যে কাউকে নিমগ্ন করে তুলবে। ভ্রমণবিলাসী সব ধর্মের মানুষ ঘুরতে যেতে পারেন নওগাঁর এ মসজিদে।

জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে মান্দা উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের কুসুম্বা গ্রামে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কুসুম্বা মসজিদ। স্থানীয়দের কাছে এর আরেক নাম কালাপাহাড়। মসজিদের সঙ্গে উত্তর-দক্ষিণ দিকে রয়েছে ৭৭ বিঘা বিশিষ্ট একটি বিশাল দিঘি। দিঘিটি লম্বায় প্রায় ১২শ’ ফুট চওড়ায় প্রায় ৯শ’ ফুট।  গ্রামবাসী মুসল্লিদের খাবার পানি, গোসল অজুর প্রয়োজন মেটানোর জন্য দিঘি নির্মাণ করা হয়।

কুসুম্বা মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণে ৫৮ ফুট লম্বা, চওড়া ৪২ ফুট। চারদিকের দেয়াল ফুট পুরু। তার ওপর বাইরের অংশ পাথর দিয়ে ঢেকে দেওয়া সামনের অংশে তিনটি দরজা। আকারে দুটি বড়, অন্যটি অপেক্ষাকৃত ছোট। দরজাগুলো খিলানযুক্ত মেহরাব আকৃতির। চার কোনায় চারটি মিনার। মিনারগুলো মসজিদের দেয়াল পর্যন্ত উঁচু আট কোনাকার। ছাদের ওপর দুই সারি মিলে রয়েছে মোট ছয়টি গম্বুজ।


মসজিদের ভেতর পশ্চিমের দেয়ালে রয়েছে তিনটি চমৎকার মেহরাবের ওপর ঝুলন্ত শিকল, ফুল লতাপাতার কারুকাজ করা। কারুকার্যগুলো খুব উন্নতমানের। দক্ষিণ দিকের মেহরাব দুইটি আকারে বড়। উত্তর দিকের মেহরাবটি ছোট। মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণ দিকে দুটি করে দরজা ছিল। মসজিদের সম্মুখ ভাগে থাকা খোলা প্রাঙ্গণ পাথর বসানো সিঁড়ি দিঘিতে গিয়ে শেষ হয়েছে। প্রবেশপথের একটু দূরে বাক্স আকৃতির এক - কালো পাথর দেখা যায়। এটিকে অনেকে কবর বলে মনে করেন।

 

কুসুম্বা মসজিদ সবরখান বা সোলায়মান নামে নবমুসলিম মসজিদটি নির্মাণ করেন। মূল প্রবেশপথে শিলালিপি অনুযায়ী মসজিদটি ৯৬৬ হিজরি বা ১৫৫৮ খ্রিষ্টাব্দে নির্মাণ হয়। শের শাহের বংশধর আফগান সুলতান প্রথম গিয়াস উদ্দীন বাহাদুরের শাসনামলে (১৫৫৪-১৫৬০ সালে) নির্মিত। সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের আমলে তার মন্ত্রী বা প্রশাসনিক কর্মকর্তা রামন দল ৯০৪ হিজরি বা ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন।

বছরজুড়ে মসজিদটির আঙিনায় ভিড় থাকে পর্যটকদের। সম্প্রতি মসজিদে আসা  দর্শনার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ টাকার নোটে ছবি দেখে অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল এখানে বেড়াতে আসার। চারপাশের পরিবেশ অনেক সুন্দর। এখানে এসে ঘুরতে পেরে ভালো লাগছে।

মসজিদের ইমাম ওবায়দুল হোসেন ও খতিব মোস্তফা আলী বলেন, মসজিদের ভেতরে চারটি কাতারে প্রায় ৮০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। ছাড়া মসজিদের সামনের অংশে খোলা স্থানে প্রায় ৭০০ মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। প্রতি শুক্রবার বছরে দুই ঈদের জামাতে মসজিদের ভেতর বাইরের পুরো চত্বর মুসল্লিতে ভরে যায়।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কাস্টোডিয়ান ফজলুল করিম আরজু বলেন, কুসম্বা মসজিদটি নওগাঁর ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী আসেন মসজিদটি দেখার জন্য। দর্শনার্থীদের সুযোগ-সুবিধার জন্য অযু গোসলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়াও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। দর্শনার্থীদের আরও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য এরইমধ্যে পিকনিক স্পট বিশ্রামাগার নির্মাণ হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য আরো বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

বিডি/সি/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর