একটি শিশুকে জন্মের পর থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এ সময় বাইরে থেকে বাচ্চাকে পানিও দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু বসয় বাড়ার সাথে সাথে শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য পুষ্টি চাহিদা বাড়ে। তাই ঠিক ৬ মাস পর থেকে বাচ্চাকে সলিড বা বাইরের বাড়তি খাবার দেওয়া শুরু করা উচিত। তবে অধিকাংশ মাকেই সন্তানকে প্রথমবার বাড়তি কি খাবার দেবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়তে দেখা যায়।
এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ডা. পূর্ণিমা মেনন মায়েদের উদ্দেশ্যে বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরেছেন।
শিশুর প্রথম খাবার হতে হবে পুষ্টিকর ও সহজে হজমযোগ্য। এটি হতে পারে গাজর, কুমড়া ও মিষ্টি আলুর মতো রঙিন সবজির মিশ্রণ। নানা রঙের মিশ্রিত ফল যেমন- কলা, আপেল, আম শিশুদের প্রথম খাবার হিসেবে দারুণ। আপনার পরিবার যদি মাংস খায়, তবে শিশুকে নরম করে মাংস খাওয়াতে পারেন। তবে ডিম শিশুদের জন্য একটি দুর্দান্ত প্রথম খাবার।
যে খাবারটিই দেবেন তা পিউরি বা নরম করে নিতে হবে। তবে শিশুর প্রথম খাবারগুলো যেন অতিরিক্ত চিনিযুক্ত না হয়। আবার এগুলো অতিরিক্ত লবণাক্তও হবে না।
শিশুদের কোনো নতুন স্বাদের সাথে পরিচয় করাতে চাইলে সেই খাবারটি পুনরাবৃত্তি করতে হবে। তাই প্রথম ২ দিন একই খাবার দিন। শিশু একবার খেতে না চাওয়ার মানে এই নয় সে ওই খাবারটা আর খাবে না। পরে আবার চেষ্টা করে দেখুন।
আপনি একটি চামচ দিয়ে বা খুব পরিষ্কার হাতে শিশুদের খাওয়াতে পারেন। আবার শিশুরা যেহেতু শিখছে তাই তারা খাবারের প্রতি আগ্রহী। তাই শিশুদের খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কিছুটা দেওয়া ও নেওয়ার মতো বিষয় খেয়াল রাখুন। শিশুদের খাওয়ানোর একটি অংশ হলো বাবা-মায়েদের জন্য তাদের ইঙ্গিতগুলো শোনা ও দেখা। তারা নিজ হাতে কিছু খেতে চাইলে তাকে সেটা করতে দিন।
যখন তারা একটু বড় হয় তখন যা হয় তা হলো, তারা তাদের খাবার স্পর্শ করতে এবং নিজের হাতেই খাওয়া শুরু করতে চায়। তাদের ৯ মাস থেকে এক বছর বয়সের মধ্যেই এ ধরনের আচরণ শুরু করে। আমরা শিশুদের কী দিচ্ছি সেটি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তবে তারা তাদের খাবারকে কীভাবে গ্রহণ করবে সে বিষয়ে তাদেরও কিছুটা স্বাধীনতা আমাদের দেওয়া উচিত।
আপনি যখন প্রথম খাবার খাওয়ানো শুরু করবেন, তখন আপনি শিশুকে দিনে প্রায় তিন বা তার বেশি বার খাবার দিন। আর এরপর শিশুরা যত বড় হতে থাকবে এবং তাদের বয়স ৯ বা ১২ মাসে পৌঁছাবে, তখন আপনাকে সংখ্যা বাড়িয়ে দিনে চারবার খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি আপনাকে খাবারের পরিমাণও বাড়াতে হবে। কারণ শিশুকে ৬ মাস বয়সে আপনি যে পরিমাণ খাবার খাওয়াতেন সেই একই পরিমাণ খাবার ১২ মাস বয়সে খাওয়ালে তা শিশুর জন্য যথেষ্ট হবে না। তাই শিশুরা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে খাওয়ানোর সংখ্যা ও পরিমাণ দুটোই বাড়াতে হবে। তবে শিশু প্রথম খাওয়া শেখার সময় বাবা-মা তাদের সঙ্গে খাবার নিয়ে কথা বলুন। যা তার মেধা বিকাশে সহায়ক হবে।