বর্তমান এ তথ্য প্রযুক্তির যুগে শিশুকে মোবাইল বা যেকোনো গ্যাজেট থেকে দূরে রাখা প্রায় অসম্ভব। তাই তাদের প্রযুক্তি সংক্রান্ত ডিভাইস ব্যবহার করতে দিলেও সব সময় সচেতন থাকতে হবে আপনাকে। এজন্য দরকার বাবা-মায়ের প্রযুক্তি তথা অনলাইন বিষয়ে সচেতনতা।
১. যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্মুক্ত রাখার মাধ্যমে তাদের নিরাপদ রাখুন। আপনার শিশু কাদের সঙ্গে, কীভাবে যোগাযোগ করছে- সে বিষয়ে বাবা-মাকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। দরকার হলে এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো খোলামেলা কথা বলুন। শিশুর জন্য বৈষম্যমূলক বা অনুপযুক্ত যোগাযোগ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আপনার শিশু যদি এ রকম কোনো কিছুর মুখোমুখি হয়, তাহলে তারা যাতে বিষয়টি তৎক্ষণাৎ আপনাকে বা বড় কাউকে জানাতে পারে- সে বিষয়ে তাকে বুঝিয়ে বলুন। তাকে আশ্বস্ত করুন। আপনার শিশু অনলাইনের কার্যক্রম নিয়ে বিমর্ষ কিনা বা আপনার কাছে কোনো কিছু গোপন করছে কিনা, সে বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল রাখুন। কীভাবে, কখন এবং কোথায় ডিভাইসগুলো (কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ইত্যাদি) ব্যবহার করা যাবে, সে বিষয়ে আপনার শিশুকে নিয়ম তৈরি করে দিন।
২. তাদের সুরক্ষিত রাখতে আপনিও প্রযুক্তি ব্যবহার করুন। আপনি শিশুকে যে ডিভাইসটি দিচ্ছেন, সেটি আপনিও ব্যবহার করুন। ডিভাইসে সর্বশেষ হালনাগাদ করা সফ্টওয়্যার ও অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম চলছে কিনা এবং প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা সেটিংস চালু আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখুন। ওয়েবক্যামগুলো প্র্যোজন ছাড়া ঢেকে রাখুন। অনলাইনে বিনামূল্যের শিক্ষা উপকরণ থেকে সতর্ক থাকুন। এ উপকরণগুলো ব্যবহার করার জন্য আপনার শিশুকে কখনোই নিজের কোনো ছবি বা পুরো নাম দেওয়া উচিত হবে না। তথ্য চুরি কমানোর জন্য গোপনীয়তা সেটিংস চালু রাখুন। আপনার শিশুকে ব্যক্তিগত তথ্য, বিশেষ করে অপরিচিত কারো কাছে, গোপন রাখার বিষয়টি শেখান।
৩. অনলাইনে তাদের সঙ্গে সময় ব্যয় করুন। একসঙ্গে মুভি দেখা বা শিশুর সাথে বসে দিনের একটা সময় মোবাইলে গেইম খেলুন। কম্পিউটারে শিশুর প্রজেক্টের কাজ করে দিন। খেলার ছলে শিশুকে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের নানা দিকে সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। প্রয়োজনে শিশুর সাথে আপনিও অনলাইনে যুক্ত থাকুন। বয়স উপযোগী অ্যাপস, গেমস এবং অন্যান্য অনলাইন বিনোদন সামগ্রী শনাক্ত করতে আপনার শিশুর সঙ্গে সময় ব্যয় করুন।
৪. স্বাস্থ্যকর অনলাইন অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহ দিন অনলাইনে এবং ভিডিও কলগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। আপনার শিশুদেরকে তাদের সহপাঠীদের প্রতি সদয় ও শ্রদ্ধাশীল হতে, পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে রুচিশীল হওয়ার পরামর্শ দিন, উদ্বুদ্ধ করুন। শয়নকক্ষ থেকে ভিডিও কলে যোগদান এড়িয়ে চলতে উৎসাহিত করুন। অনলাইনে কেউ উত্ত্যক্ত করলে পরিত্রাণের জন্য তাকে নীতিমালা ও হেল্পলাইনের সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করুন। শিশুরা অনলাইনে বেশি সময় ব্যয় করার কারণে তাদের অনেক বেশি বিজ্ঞাপনের সংস্পর্শে আসতে হতে পারে, যেসব বিজ্ঞাপনে অস্বাস্থ্যকর খাবার, লৈঙ্গিক ধারণাভিত্তিক বা বয়স অনুপযুক্ত উপাদানের প্রচারণা থাকতে পারে। তাদের অনলাইন বিজ্ঞাপনগুলো শনাক্ত করে নেতিবাচক বার্তাসহ ভুলগুলো খুঁজে বের করে সঠিকটি জানার সহায়তা করুন।
৫. শিশুদের মজা করতে এবং নিজেকে প্রকাশ করতে দিন। সম্ভব হলে ঘরের বাইরে সময় কাটানোসহ অফলাইন কার্যক্রমের মাধ্যমে অনলাইন বিনোদনের সঙ্গে ভারসাম্য রাখুন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিশুকে নানা সৃজনশীল কার্মকাণ্ড করতে উৎসাহ দিন।
বিডি/আর/এমকে