এবারের এশিয়া কাপে ভক্তদের হতাশ করেছে বাংলাদেশ। তবে শেষ ম্যাচে ভারতকে
হারিয়ে নিজেদের সামর্থের জানান দিয়েছে টাইগাররা। এশিয়া কাপ থেকে ছিঠকে গিয়েছিল অনেক
আগেই। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা ছিল কেবল নিয়ম রক্ষার। এ ম্যাচে ব্যাটে-বলে লড়ে ভারতকে
৬ রানে হারানোর স্বস্তি নিয়ে এশিয়া কাপ শেষ করল সাকিব বাহিনী।
শুক্রবার কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস ভাগ্য পক্ষে ছিল না সাকিবদের।
হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ২৬৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। জবাবে
৪৯.৫ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৫৯ রানে থামে ভারত। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ফাইনালে মাঠে
নামার আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে বড় ধাক্কা খেল রোহিত শর্মার দল।
এদিন ২৬৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ভারতের। অভিষিক্ত
তানজিম হাসান সাকিবের দুর্দান্ত বোলিংয়ে দলীয় ১৭ রানের মাথায় দুই ওপেনার রোহিত শর্মা
ও তিলক ভার্মাকে হারায় ভারত। রোহিত শূন্য ও তিলক ভার্মা ব্যক্তিগত ৫ রানে সাজঘরে ফেরেন।
এরপর অবশ্য কেএল রাহুলকে নিয়ে জুটি গড়ে চাপ সামাল দেন শুভমান গিল। এই দুইজনের
৫৭ রানের জুটি ভাঙেন শেখ মেহেদি। ৩৯ বলে ১৯ রান আসে রাহুলের ব্যাট থেকে। এরপর সূর্যকুমার
যাদবকে নিয়ে ফের জুটি গড়েন শুভমান। সেই জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে স্বস্তি দেন সাকিব। ৩৪
বলে ২৬ রান আসে সূর্যকুমারের ব্যাট থেকে।
এরপর জাদেজাকে নিয়ে ফের জুটি গড়েন গিল। যদিও এই জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
দলীয় ১৭০ রানের মাথায় রবীন্দ্র জাদেজাকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজ। এরপর অক্ষর প্যাটেলকে
সঙ্গী করে ভারতকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার কাজটা করতে থাকেন গিল। মাঝে তুলে নেন শতক।
শেষমেশ লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে গিল ছোট ছোট জুটিতে ভর করে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা
করলেও জিততে পারেনি ভারত। ১২১ রানে গিল বিদায় নিলে শেষ পর্যন্ত জয়ের বন্দরে যেতে ব্যর্থ
হয় ফাইনালিস্টরা।
এর আগে, ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। নাঈম শেখের বদলে একাদশে
আসা তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস মিলে ওপেন করেন। দু’ওভারের মধ্যে ভাঙে এ জুটি। ইনিংসের
তৃতীয় ওভারেই বোল্ড হন লিটন। মোহাম্মদ শামির বল বুঝে ওঠার আগেই স্টাম্প হন তিনি। ফেরেন
শূন্যতে। পরের ওভারে আউট হন তানজিদ হাসান তামিমও। আউট হওয়ার আগে স্কোরবোর্ডে ১৩ রান
যোগ করেন।
মাত্র ১৫ রানে চাপা পড়া বাংলাদেশের বিপদ আরও বাড়ালেন এনামুল হক বিজয়। ১০
মাস পরে একাদশে ফিরে তিনি টিকলেন মাত্র ১১ বল। শার্দুল ঠাকুরের বলে পুল করতে গিয়ে খাড়া
ওপরে ক্যাচ তুলে দেন এনামুল। ৪ রানেই বিদায় এনামুলের। শুরুতেই তিন উইকেট হারিয়ে চাপে
পড়ে যায় বাংলাদেশ। মিরাজকে নিয়ে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখতে শুরু না করতেই আউট হন মিরাজ।
১৩ রান করে অক্ষর প্যাটেলের বলে আউট হন মিরাজ।
মিরাজের বিদায়ের পর মাঠে নামেন হৃদয়। সাকিবের সাথে জুটি গড়ে বড় স্কোর দাঁ
করান তারা। ভারতীয় বোলারদের দেখেশুনে খেলে ৬৫ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন সাকিব। তাওহিদও
ছুটতে থাকেন দারুণ ছন্দে।
সাকিবকে ৮০ রানে থামান শার্দুল ঠাকুর। ৮৫ বলে ৬ বাউন্ডারি আর তিন ছক্কায়
সাজানো ছিল তার ইনিংস। সাকিবের বিদায়ে ভাঙে ১০১ রানের জুটি। এরপর উইকেটে এসে হতাশ করেন
শামীম। উইকেটের এসে জাদেজার ২০০তম শিকার হন তিনি। ফেরেন মাত্র ১ রানে।
সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে উইকেটে থিতু হয়ে ছিলেন হৃদয়। কিন্তু, হাফসেঞ্চুরি
ছুঁয়ে তিনিও ফিরলেন সাজঘরে। ৮১ বলে ৫৪ রান করা হৃদয় ফেরার পর বাকি পথ টানেন নাসুম আহমেদ
ও শেখ মেহেদি। বোলার নাসুম দায়িত্ব নেন ইনিংস
গড়ার। খেলেন ৪৫ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। মেহেদিও করেন ২৯ রান। শেষ পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে
২৬৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৬৫/৮ (তামিম ১৩, লিটন ০, বিজয় ৪, সাকিব ৮০, মিরাজ
১৩, তাওহিদ ৫৪, শামীম ১, নাসুম ৪৪, মেহেদী ২৯, তানজিম ৯; শামি ৮-১-৩২-২, শার্দুল ১০-০-৬৫-৩,
প্রসিদ ৯-০-৪৩-১, অক্ষর ৯-০-৪৭-১, তিলক ৪-০-২১-০, জাদেজা ১০-১-৫৩-১)।
ভারত : ৪৯.৫ ওভারে ২৫৯ (রোহিত ০, শুভমান ১২১, তিলক ৫, রাহুল ১৯, ইশান ৫,
সূর্যকুমার ২৬, জাদেজা ৭, অক্ষর ৪২, শারদুল ১১, শামি ৬, প্রসিদ ০; তানজিম ৭.৫-১-৩২-২,
মোস্তাফিজুর ৮-০-৫০-৩, নাসুম ১০-০-৫০-০, সাকিব ১০-২-৪৩-১, মেহেদি ৮-১-৩৬-২, মিরাজ ৫-০-২৯-১)
ফলাফল : বাংলাদেশ ৬ রানে জয়ী।