লম্বা সময় পর দলে ফিরেছেন তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দল ফিরেই ব্যাটারদের
আসা-যাওয়ার মধ্যেও ভালো স্কোর গড়েন দু’জনেই। কিন্তু দুজন রানে ফিরলেও বাকিদের ব্যর্থতায়
জয়ের নাগাল পায়নি বাংলাদেশ। ইশ শোধির ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের সামনে ৮৬ রানে হার মানল
বাংলাদেশ।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে টস জিতে আগে ব্যাট
করতে নেমে ৪৯.২ ওভারে স্কোরবোর্ডে ২৫৪ রান তুলেছে নিউজিল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে ১৬৮
রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ম্যাচ ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। তাই দ্বিতীয়টিতে
জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে লকি ফার্গুসনের দল। নিউজিল্যান্ডের জয়ের নায়ক
ইশ শোধি একাই ৩৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ৬ উইকেট।
মিরপুর শেরেবাংলায় রান তাড়া করতে নেমে ভালো শুরুর আভাস দেন দুই ওপেনার লিটন
দাস ও তামিম ইকবাল। তবে থিতু হতে পারলেন না লিটন। ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হওয়া লিটন ফিরলেন
৬ রান করে। কাইল জেমিসনের অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে থার্ডম্যানে ক্যাচ তুলে
দেন ফেরেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
ওয়ানডাউনে নামা তানজিদ তামিমও পারেননি থিতু হতে। কিউই অধিনায়কের ফার্গুসনের
বলে ১৬ রানে থামেন তিনি। দুই বছর পর দলে ফেরা সৌম্য সরকারকে সুযোগ দেওয়া হয় চার নম্বরে।
এতদিন পর ফিরে রানের খাতাও খুলতে পারেননি তিনি। মাত্র দুই বল খেলে বিদায় নিলেন শোধির
বলে। তিনি ফাঁদে ফেলেন তাওহিদকেও। কিউই তারকার গুগলি সামনে এগিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড
হন তাওহিদ।
তিন টপ অর্ডার হতাশ করলেও চোট কাটিয়ে দলে ফেরা তামিম সেটা করেননি। ১৯ ওভার
পর্যন্ত টিকতে পেরেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক। ইনিংসের ১৮.৫তম ওভারে শোধির বল
লেগে যায় তামিমের গ্লাভসে। যদিও আম্পায়ার আউট দেননি শুরুতে। তবে তামিম নিজে ড্রেসিংরুমে
হেঁটে যান। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় সত্যিই আউট ছিলেন তিনি। ৫৮ বলে ৪৪ রান করে থামে
তার ইনিংস।
তামিমের পর সবার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। নিজের জায়গা ফিরে
পাওয়ার শেষ সুযোগটা কাজে লাগানোর ছিল তার। নিজের চেষ্টায় মোটামুটি সফল তিনি। দলের বিপদে
মাঠে নেমে জানান দিয়েছেন এখনও হারিয়ে যাননি তিনি। যেখানে তার জায়গা পাওয়া নিয়েই ছিল
সংশয় সেখানে দলের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। ম্যাচ শেষ করে আসতে না পারলেও দলের বিপদে ৭৬ বলে
৪৯ রানের ইনিংস উপহার দেন মাহমুদউল্লাহ। তিনি ফিরে গেলে শেষ পর্যন্ত দুইশর নিচে থেমে
যায় বাংলাদেশ।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি নিউজিল্যান্ডের। এই ম্যাচেও বাংলাদেশকে
দারুণ শুরু এনে দেন মুস্তাফিজ রহমান। দলীয় ১৫ রানের মাথায় মুস্তাফিজের শর্ট ডেলিভারিতে
রানের খাতা খোলার আগেই উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে তালুবন্দী হন ওপেনার উইল ইয়ং।
দলীয় ২৬ রানের মাথায় আরেক ওপেনার ফিন অ্যালেনকেও ফেরান মুস্তাফিজ। বাঁহাতি
পেসারের অফ স্ট্যাম্প করিডোরে করা ডেলিভারিতে মিড অফের ওপর দিয়ে শট গিয়ে স্লিপে সৌম্যর
হাতে ধরা পড়েন অ্যালেন (১২)।
এরপর উইকেটের খাতায় নাম লেখান অভিষিক্ত পেসার খালেদ। দলীয় ৩৬ রানের মাথায়
নিজের প্রথম ওয়ানডে উইকেট তুলেন নেন ডানহাতি এই পেসার। তার লাফিয়ে ওঠা বলে স্কয়ার লেগের
দাঁড়িয়ে থাকা তাওহিদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ তুলেন দেন চ্যাড। ১৯ বলে ১৪ রান আসে তার ব্যাট
থেকে।
এরপরই যেন পাল্টে যায় নিউজিল্যান্ড। হেনরি নিকল ও টম ব্লান্ডেলের ১০৫ রানের
জুটিতে ভর করে লড়াকু স্কোরের ইঙ্গিত দেয় কিউইরা। অবশেষে এই জুটি ভাঙেন খালেদ। ব্যাক
অফ লেন্থ ডেলিভারিতে স্কয়ার কাট করতে গিয়ে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন নিকোলস।
৬১ বলে ৪৯ রান করে ফেরেন তিনি। চতুর্থ উইকেট হারানোর পর দলীয় ১৫৭ রানের মাথায় শেখ মেহেদীর
বলে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়েন রবীন্দ্র রাচীন (১০)।
কিউইদের দলীয় ১৬৬ রানের মাথায় উইকেটের খাতায় নাম লেখান হাসান মাহমুদ। দুশ্চিন্তার
কারণ হয়ে ওঠা টম ব্লান্ডেলকে ফেরান এই ডানহাতি পেসার। হাসানের দুর্দান্ত ইয়র্কারে কোনো
জবাব দিতে পারেননি ব্লান্ডেল। তবে আউটে আগে ৬৬ বলে ৬৮ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন
তিনি।
এরপর কোলে ম্যাককনচিকে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন নাসুম আহমেদ। তবে ইশ সোদি
ও কাইল জেমিসনের ব্যাটে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানায় কিউইরা। তবে সেই জুটিও বেশি লম্বা
হতে দেননি মেহেদী। তুলে নেন নিজের দ্বিতীয় উইকেট। দলীয় ২১৯ রানের মাথায় মেহেদির করা
বল মিড অনের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে তার হাতেই ধড়া পড়েন জেমিসন। ২৭ বলে ২০ রান আসে
ডানহাতি এই ব্যাটারের ব্যাট থেকে। শেষ পর্যন্ত লোয়ার অর্ডারে আর কেউ জ্বলে না উঠায়
২৫৪ রানে থামে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ: ৪১.১ ওভারে ১৬৮ (তামিম ৪৪, লিটন ৬, তানজিদ ১৬, সৌম্য ০, তাওহিদ
৪, মাহমুদউল্লাহ ৪৯, মেহেদি ১৭, নাসুম ২১, হাসান ০, মোস্তাফিজুর ২, খালেদ ১; বোল্ট
৮-০-৩৭-০, জেমিসন ৭-১-৩২-২, শোধি ১০-১-৩৯-৬, ফার্গুসন ৬.১-১-২৮-১, রবীন্দ্র ৮-০-২৬-০,
কোলে ২-১-৩-১)
নিউজিল্যান্ড : ৪৯.২ ওভারে ২৫৪ (অ্যালেন ১২, ইয়ং ০, চ্যাড ১৪, নিকলস ৪৯,
ব্লান্ডেল ৬৮, রাচীন ১০, কোলে ২০, সোদি ৩৫, জেমিসন ২০, ফারগুসন ১৩, বোল্ট ১ ; মোস্তাফিজ
১০-১-৫৩-২, হাসান ১০-১-৪৬-১, খালেদ ৯.২-১-৬০-৩, মেহেদী ১০-০-৪৫-৩, নাসুম ১০-০-৪৪-১)।
ফলাফল : নিউজিল্যান্ড ৮৬ রানে জয়ী
সিরিজ : নিউজিল্যান্ড ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে