স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থায় একটি গুরুতর সঙ্কট হচ্ছে বিদেশি হস্তক্ষেপ। এ হস্তক্ষেপের ফলে নির্বাচনের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা সম্মুখীন হয় হুমকির, ক্ষুণ্ণ হয় জনগণের ভোটাধিকার। নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা হারায় এবং জনগণ নির্বাচনে আস্থা হারাতে পারে। এমনকি নির্বাচনের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত হয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং গণতন্ত্র হুমকির কারণ হতে পারে।
স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর বিদেশি হস্তক্ষেপ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিষয়টি ওঠে এসেছে। শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ কনফারেন্স হলে এ আলোচনা সভা হয়, আয়োজন করে এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি)।
ইআরডিএফবির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন- প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ দূত মো. ওয়ালিউর রহমান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপ উপাচার্য ও ইআরডিএফবির সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কলামিস্ট অজয় দাশগুপ্ত, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তৌহিদ প্রমুখ।
স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থায় বিদেশি হস্তক্ষেপের ফলাফল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ দূত মো. ওয়ালিউর রহমান বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ইইউ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক শক্তির বক্তব্য ও ভূমিকা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপের পর্যায়ে রূপ নিচ্ছে। এটা আন্তর্জাতিক আইন এক প্রকার পরোক্ষ লঙ্ঘন বলেই মনে হয়। কেননা আন্তর্জাতিক আইনে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর বিদেশি হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
দেশে অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের প্রচার করার পেছনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কিছু ভূমিকা রয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া এবং সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি এ দেশের নির্বাচনকে আরও গণতান্ত্রিক এবং প্রতিনিধিত্বমূলক করতে সহায়তা করেছে অতীতে- জানান প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ দূত।
মো. ওয়ালিউর রহমান আরও জানান, বাইডেন প্রশাসন প্রথম থেকেই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে নিজেদের পররাষ্ট্রনীতর মূলভিত্তি হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। তাই এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ আশ্চর্যজনক নয়। কিন্তু তাদের আরোপিত ভিসানীতি সরাসরি চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচনে হস্তক্ষেপের পর্যায়ে চলে গেছে বলে মনে করি আমি।
বুয়েট উপ উপাচার্য ও ইআরডিএফবির সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান বলেন, বিশ্বের কিছু পরাশক্তি এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করেছে। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে এ মেনে নেওয়া যায় না, কখনো মেনে নেওয়া হবে না। তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ একটি জিও পলিটিক্যাল বাস্তবতার মধ্যে আছে। বাইরের একটি রাষ্ট্র কীভাবে চিহ্নিত করবে- অমুক অমুক নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবে?
বিডি/এন/এমকে