এ নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে টানা ২য় হার দেখল বাংলাদেশ। যারা ভাবছিলেন সাকিবের
ঘূর্ণিতে কুপোকাত হবে নিউজিল্যান্ড, সে গুড়ে বালি। নিউজিল্যান্ডের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি
টাইগাররা। সাকিবদের দেওয়া ২৪৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪২.৫ ওভারে আট উইকেট হাতে
রেখে জয় তুলে নেয় কিউইরা।
শুক্রবার চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯
উইকেট হারিয়ে ২৪৫ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।
২৪৬ রানের মাঝারি লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা মনমতো হয়নি নিউজিল্যান্ডের।
দলীয় ১২ রানের মাথায় পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ
দিয়ে ফেরেন রাচিন রবীন্দ্র। ১৩ বলে ৯ রান করে বাঁহাতি এ ব্যাটার।
শুরুতে উইকেট হারালেও দলকে চাপে পড়তে দেননি দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার কেন উইলিয়ামসন
ও ডেভন কনওয়ে। এই দুজনের ৮০ রানের জুটিতে ভর করে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানায় কিউইরা।
দলীয় ৯২ রানে কনওয়েকে ফিরিয়ে ব্রেকথ্রু দেন সাকিব। তবে, ততক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে।
ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ তখন নিউজ্যিান্ডের হাতে। ৫৯ বলে ৪৫ করে ফেরেন বাঁহাতি এ ব্যাটার।
এরপর ড্যারেল মিচেলকে নিয়ে ফের বড় জুটি গড়েন উইলিয়ামসন। সেই জুটিতেই মূলত
জয়ের ভিত গড়ে ফেলে কিউইরা। যদিও দলীয় ১৯৮ রানের সময় চোটের কারণে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে
সাজঘরে ফেরেন উইলিয়ামসন। এর আগে খেলেন ১০৭ বলে ৭৮ রানের কার্যকরী ইনিংস। উইলিয়ামসনের
চলে যাওয়ার পর গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে বাকি কাজ সারেন মিচেল।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস পারেননি
আস্থার প্রতিদান দিতে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৬ রানের ইনিংস খেললেও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে
গোল্ডেন ডাকে ফেরেন ডানহাতি এই ব্যাটার। লেগ স্ট্যাম্পের ওপর করা বোল্টের ডেলিভারিতে
ফ্লিক করতে গিয়ে থার্ড ম্যানে থাকা হেনরির হাতে ধরা পড়েন লিটন।
শুরুতেই এমন ধাক্কা মোটেও প্রত্যাশিত ছিল না বাংলাদেশের জন্য। যদিও তামিম-মিরাজ
জুটিতে চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। তবে, সেই জুটিও বেশিদূর যায়নি। দলীয়
৪০ রানের মাথায় লকি ফার্গুসনের ফুল লেন্থ ডেলিভারি আড়াআড়ি ব্যাটে খেলতে গিয়ে স্কয়ার
লেগের ডেভন কনওয়ের হাতে ধরা পড়েন তামিম। ১৭ বলে ১৬ করে ফিরেন সাজঘরে।
তামিমের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটার মিরাজ
ও শান্ত। দুজনেই দলীয় ৫৬ রানে ফেরেন সাজঘরে। ফার্গুসনের শর্ট লেন্থ ডেলিভারিতে পুল
করতে গিয়ে ফাইন লেগে হেনরির ক্যাচে পরিণত হন মিরাজ। আর পার্ট টাইম বোলার গ্লেন ফিলিপসের
প্রথম বলেই মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত। আট বলে সাত রান করে ফেরেন বাঁহাতি এই
ব্যাটার।
দলীয় ৫৬ রানে চার উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে, মুশফিক-সাকিবের
ব্যাটে সেই চাপ কাটিয়ে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। দেখেশুনে ব্যাটিং করতে থাকেন দুজনই। দলীয়
১৫২ রানে গিয়ে থামে এই জুটি। ফার্গুসনের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে থাকা
লাথামের হাতে ক্যাচ তুলে দেন সাকিব। তার বিদায়ে ভাঙে ৯৬ রানের জুটি। ৫১ বলে ৪০ রান
আসে অধিনায়ক সাকিবের ব্যাট থেকে।
এরপর তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন মুশফিক। যদিও সেই জুটি বেশিদূর
যায়নি। দলীয় ১৭৫ রানে হেনরির নিচু হয়ে যাওয়া বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মুশফিক। আউটের আগে
খেলেন ৭৫ বলে ৬৬ রানের ইনিংস।
মুশফিকের পর দ্রুত বিদায় নেন তাওহিদও। একের পর এক উইকেট হারানোর ধাক্কা
সামলে বড় ইনিংস আর গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। শেষের দিকে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে চড়ে লড়াকু
সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৪৫/৯ (লিটন ০, তামিম ১৬, মিরাজ ৩০, শান্ত ৭, সাকিব
৪০, মুশফিক ৬৬, তাওহিদ ১৩, মাহমুদউল্লাহ ৪১*, তাসকিন ১৭, মুস্তাফিজ ৪, শরিফুল ২*; বোল্ট
১০-০-৪৫-২, হেনরি ১০-০-৫৮-২, ফার্গুসন ১০-০-৪৯-৩, স্যান্টনার ১০-১-৩১-১, ফিলিপস ২-০-১৩-১,
রাচীন ৭-০-৩৭-০, মিচেল ১-০-১১-০)।
নিউজিল্যান্ড : ৪২.৫ ওভারে ২৪৮/২ (কনওয়ে ৪৫, রবীন্দ্র ৯, উইলিয়ামসন ৭৮,
মিচেল ৮৯, ফিলিপস ১৬ ; মুস্তাফিজ ৮-০-৩৬-১, শরিফুল ৭.৫-১-৪৩-০, তাসকিন ৮-০-৫৬-০, সাকিব
১০-০-৫৪-১, মিরাজ ৯-০-৫৮-০)