শীতকালে বিধবা ও নিঃসন্তান সোনাভান হয়ে ওঠেন পিঠা বিক্রেতা

সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ, গুরুদাসপুর (নাটোর)
২৩ অক্টোবর ২০২৩

নিঃসন্তান সোনাভানের (৭০) স্বামী সাদেক আলী মারা গেছেন ১০ বছর আগে। এরপর অন্যের ঘর গৃহস্থালীতে কাজ করে এক রকম চলত তার সংসার। কিন্ত বয়স্কের কারণে এ কাজে নিযুক্ত করতে এখন আর কেউ তেমন একটা আগ্রহ দেখায় না। ফলে অনেকটা খেয়ে না খেয়েই চলে তার সংসার। তবে শীতকালটা সোনাভানের জন্য যেন একটা আশির্বাদ। শীতের পাঁচ মাস পিঠা বেচে স্বচ্ছলে চলে তাঁর সংসার। সোনাভান বেওয়া নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের আনন্দ নগর মহল্লার বাসিন্দা।

সম্প্রতি দেখা যায়, আনন্দ নগর-খুবজীপুর প্রধান সড়কের স্কুল মোড়ে চুলা জ্বলছে সোনাভানের। চুড়ায় বসানো হাড়িয়ে গরম হচ্ছে পানি। আর পানির বাস্পে সেদ্ধ হচ্ছে ভাপা পিঠা। পাঁচ টাকায় প্রতিটি পিঠা পেতে তার চুলর সামনে অপেক্ষা করছে শিশুরা। তাদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বা বসে শীতে গরম পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন অনেকে। সন্ধ্যায় একইস্থানে তিনি বিক্রি করেন চিতই পিঠা।

সোনাভান বলেন,-‘ঢেঁকিছাঁটা চালের গুড়ার সাথে খেজুরের গুড়ের মিশ্রন দিয়ে গরম পানির ভাঁপে তৈরী হয় ভাপা পিঠা। আর চালের গুড়ার সাথে পানি মিশিয়ে মন্ড তৈরী করে সেটি মাটির তাওয়ায় ঢাকনা দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেখে নামিয়ে নিলেই তৈরী হয় চিতই পিঠা। চিতই পিঠার সঙ্গে দেওয়া হয় ধনে পাতা,কালো জিরা,শরিষা বাটা,কাঁচা মরিচ পেয়াজ দিয়ে তৈরী ভর্তা। এ ভর্তা পিঠার স্বাদকে বহুগুন বাড়িয়ে দেয়।’

সোনাভান বেওয়া আরো বলেন,-‘প্রতিদিন থেকে কেজি চালের গুড়ার পিঠা তৈরী করি। চালের গুড়া,খেজুর গুড়,জ্বালানী,অন্যান্য উপকরন বাবদ খরচ হাজার টাকা। গড়ে দৈনিক বিক্রি ১হাজার ৫০০ টাকা। খরচ বাদে ৫০০ টাকার মতো আয় হয়।

পিঠা খেতে আসা যুবক জুয়েল রানা বলেন, ‘বাড়িতে সব সময় পিঠা তৈরি সম্ভব হয় না। মাঝেমধ্যে পিঠা খেতে আসি। নিজে খেয়ে বাড়ির অন্য সদস্যদের জন্য নিয়ে যাই। এখানে প্রতিটি পিঠা টাকায় পাওয়া যায়।

 সোনাভান বেওয়ার মতো উপজেলার সব হাটবাজার সড়কের মোড়ে শীতের পিঠা তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন অনেকেই। অস্থায়ী দোকানগুলো সকাল ৬টা থেকে ৯টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি চলে। রস পিঠা,ঝাল পিঠা,তেলে ভাজা পিঠা বিক্রি হলেও চিতই ভাপা পিঠার ক্রেতাই।

রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মাজেম আলী মলিন বলেন,-‘শীত আর পিঠা বাঙালীর ঐতিহ্যের অংশ। আর শীতের পিঠা ভোজন রসিক বাঙালীর অন্যতম প্রধান খাবারও বটে। কর্মব্যস্ত মানুষের পক্ষে বাড়িতে পিঠা তৈরির সময় বের করা কঠিন। এসব মানুষের জন্য শীতের পিঠা খাওয়ার উপযুক্ত স্থান পথের ধারের দোকান।

 

বিডি/সি/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর