প্রেমিকের সামনেই আত্মহত্যা করেন হিমু

International
০৪ নভেম্বর ২০২৩

‘আত্মহত্যার’ জন্য মইয়ের ওপর থেকে যখন গলায় রশি পেঁচিয়ে ঝুলে পড়েন হুমায়রা হিমু তখন একই রুমের খাটে বসা ছিলেন তার ‘প্রেমিক’ রুফি ওরফে উরফি জিয়া। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাবকে তিনি এই তথ্য জানিয়েছেন।

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ বিষয়ে ব্রিফিং করেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। উরফি জিয়া র‍্যাবকে যেসব কথা জানিয়েছেন তার বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।

আল মঈন জানান, জিয়া র‍্যাবকে বলেছেন, ঘটনার সময় হিমুর রুমে ছিলেন তারা দুজন। তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছিলো। পাশের রুমে ছিলেন মেকআপম্যান এবং হিমুর পালিত ভাই মিহির। 

কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হিমু বলেন, আমি কি মরতে পারি না? দেখ, পারি কিনা। এই বলেই তিনি রশিতে ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়েন। এই সময় রুমের খাটের উপর বসা ছিলেন উরফি জিয়া। সেখান থেকে দৌড়ে গিয়ে হিমুকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন তিনি।

উরফি জিয়া র‍্যাবকে বলেন, ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ বুধবার সন্ধ্যা থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে হিমুর সঙ্গে তার মনোমালিন্য চলছিলো। এর কারণ হিসেবে হিমুর ভিগো অ্যাপসের জুয়া খেলা এবং বিবাহের জন্য চাপ দেয়ার কথা জানান উরফি। 

এই কারণে বুধবার রাতেই হিমু উরফি জিয়াকে বলেছিলেন, তার কথা মেনে না নিলে তিনি আত্মহত্যা করবেন। এই মর্মে একটি চিরকুট লিখে তার ছবি তুলে সেটি উরফি জিয়াকে পাঠিয়েছিলেন হিমু। আলামত হিসেবে র‍্যাব সেই চিরকুটটি পেয়েছে বলে জানান আল মঈন।

উরফি জিয়ার বরাতে র‍্যাব জানায়, ২০০০ সালে প্রথম বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন হুমায়রা হিমু। ২০০৫ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ২০১২ সালে উরফি জিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় হিমুর। 

তার এক খালাতো বোনের সাথেও পরিচয় হয় উরফির। তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিলো। পরবর্তীতে তাদের বিয়েও হয়। কিন্তু দুই মাস পরই উরফি জিয়া হিমুর খালাতো বোনকে ডিভোর্স দেন। 

তাদের ডিভোর্সের পরেও হিমুর সঙ্গে উরফির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো এবং নিয়েমিত তাদের যোগাযোগ হতো। এরই মধ্যে হিমুর সাথে তৌফিক নামে একজনের তৈরি সুসম্পর্ক হয়। কিন্তু ২০১৭/১৮ সালে তৌফিকও আত্মহত্যা করেন। এতে হিমুর মানসিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে। তিনি একাকীত্ব বোধ করতেন। এই সময় উরফির সঙ্গে হিমুর আরও ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।

এক বছর আগে হিমুর মা মারা যান। এরপর থেকেই তিনি বাসায় তিনি মেকআপম্যান তথা পালিত ভাই মিহিরকে নিয়ে একাই বাস করছিলেন।

মামলার এজাহার, বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যাচাই করে এবং গ্রেফতার উরফি জিয়ার বক্তব্যের ভিত্তিতে আল মঈন জানান, চার মাস আগে হিমুর সঙ্গে তার সম্পর্ক গভীর হয় এবং তারা দুজন সম্মত হন যে, বিয়ে করবেন। সেই থেকে হিমুর বাসায় উরফি জিয়া নিয়মিত যাতায়াত করতেন।

গত চার মাসে বিভিন্ন সময় নানান ইস্যুতে দুজনের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে। এসব নিয়ে প্রায়ই তারা কথাবার্তা বন্ধ করে দিতেন।

উরফি জিয়া র‍্যাবকে জানিয়েছেন, ভিগো অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইন জুয়া খেয়াল আসক্ত ছিলেন হিমু। এই জুয়া খেলার বিষয়ে তিনি অনেক বেশি ইমোশনাল ছিলেন। জুয়া খেলার জন্য গত চার মাসে তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন উরফি জিয়া। এটা নিয়েও তাদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ড হয়েছে।

গতকাল (বুধবার) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অন্যান্য দিনের মতো হিমুর সঙ্গে দেখা করতে উত্তরার বাসায় যান উরফি জিয়া। সেখানে হিমুর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে হিমু আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দেন। কিন্তু তার কথায় উরফি তেমন গুরুত্ব দেননি। কারণ, এর আগে কয়েকবার তিনি একইভাবে আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দিলেও সেটা করেননি।

কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হিমু অন্য রুম থেকে মই নিয়ে আসেন। হিমুর রুমের ফ্যান ঝুলানোর লোহার সঙ্গে আগে থেকেই প্লাস্টিকের রশি বাঁধা ছিলো। জিয়া জানায়, বুধবার রাতেই ভিডিও কলে আত্মহত্যার জন্য ঝুলানো রশি তাকে দেখিয়েছিলো এবং বলেছিলেন, তার কথা না শুনলে তিনি আত্মহত্যা করবেন।

ঘটনার দিন তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং হাতাহাতি হয় বলেও ধারণা র‍্যাবের। কারণ সেখানে বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গেছে। উরফি জিয়া জানিয়েছেন, এক পর্যায়ে মই বেয়ে উঠে হিমু তাকে বলেন, আমি আত্মহত্যা করবো। কিন্তু তিনি হিমুর কথায় গুরুত্ব দেন না। হঠাৎ করে হিমু গলায় ফাঁস নিয়ে ঝুলে পড়েন।

উরফির দাবি, তিনি দৌড়ে গিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পারছিলেন না। পরে মেকআপম্যানসহ তিনি রান্না ঘর থেকে একটি বটি নিয়ে এসে রশি কেটে হিমুকে নামান। পরবর্তীতে জিয়া, মেকআপম্যান এবং বাসার দারোয়ান তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে গেলে ডাক্তার পুলিশের সহযোগিতা নেয়ার কথা বললে উরফি জিয়া সেখান থেকে হিমুর গাড়ি এবং মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যান।

তার কাছে র‍্যাব জিজ্ঞাসা করেছিলো, হিমুর মোবাইলগুলো কেন নিয়ে গেলেন? এর উত্তরে জিয়া বলেন, তিনি এই ফোনগুলো বিক্রি করে দেয়ার চিন্তা করেছিলেন।



মন্তব্য
জেলার খবর