২১ দিন আগের ঘটনা, দিনটা ছিল শুক্রবার (১০ নভেম্বর)। সেদিন দুপুরেই নিজের একমাত্র ছেলে আবির হাসানের সঙ্গে শেষ কথা হয় শামীম হাসান মিলনের। আর রাত থেকেই ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) আবির শুয়ে আছে অচেতন হয়ে। দুপুরের পর সড়ক দুর্ঘটনায় ‘জ্ঞান’ হারানো আবির ২১ দিনে একবার; একটা মুহূর্তের জন্যও চোখের পাতা খোলেনি।
ছেলের এমন পরিস্থিতিতে ২১ দিনের মাথায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন মিলন। তিনি লিখেছেন, ‘…সন্তানের এই কষ্টটা দু'চোখে দেখা কতো যে কষ্টের, বুকের ভেতরটা যেন দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে যাচ্ছে।’ স্ট্যাটাসে তিনি আবিরের বিষয়ে আশা জাগানিয়া খবরও দিয়েছেন।
শামীম হাসান মিলনের পরিচয় হচ্ছে, তিনি দৈনিক সমকালের চাটমোহর প্রতিনিধি। তার বাবা প্রয়াত আব্দুল হামিদ ঐতিহ্যবাহী চাটমোহর রাজা চন্দ্র নাথ ও বাবু শুম্ভু নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও চাটমোহর প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন। পাবনার চাটমোহর শহরের মধ্যশালিখা মহল্লায় তার বাড়ি। আবির হাসান ওই বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীর ছাত্র।
জানা গেছে, বাবার মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিল আবির। টেবুনিয়া-বাঘাবাড়ি সড়কের গুনাইগাছা এলাকায় একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় তার মোটরসাইকেলের। সেখান থেকে তাকে প্রথমে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে রাজশাহীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিন দিনেও অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় পরে রাজধানী ঢাকায় ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে মাথায় সফল অস্ত্রোপচার হলেও ২১ দিনে ‘জ্ঞান’ ফেরেনি তার।
সন্তানকে বাবা সম্বোধন করে স্ট্যাটাসটিতে মিলন লিখেছেন, ‘চোখ মেলে আজ ২১ দিন বাবা ডাকতে পারেনি বাবা, আইসিইউ বেডে বাবা আমার নিথরভাবে শুয়ে আছে। হাজারও মানুষের দোয়া আর ভালবাসা পেয়েছে।’
ছেলের জন্য যারা দোয়া করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে এ বাবা আরও লিখেছেন,‘সবাই প্রতিনিয়ত আল্লাহর দরবারে একটাই আকুল আবেদন করছেন আবিরের সুস্থতা কামনায়। আপনাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ।’
ছেলের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মিলন স্ট্যাটাসটিতে লিখেছেন, ‘আজ সেই শুক্রবার। আজও জ্ঞান ফেরেনি আবিরের। বিকালে দেখতে গিয়ে আমার বাবার হাত ধরে বেশ কিছু সময় ছিলাম ভাঙ্গা পাজর নিয়ে দাঁড়িয়ে।’
আবিরের বিষয়ে আশা জাগানিয়া খবর দিতে গিয়ে মিলন বলেছেন- ‘বাবা, বাবা কখনো আবির বাবা বলে ডাকলাম, ডান হাতের আঙ্গুল একটু নড়ানোর চেষ্টা করলো, আবারও ডাকছি বাবা; বাবা, মনে হলো বাবা আমার শুনতে পেয়ে মাথাটা একটু নড়ানোর চেষ্টা করলো।’
কষ্টের সময় দ্রুত না ফুরালেও আইসিইউতে ছেলের পাশে থাকা বাবার সময়টা যেন ক্ষণিকের মধ্যেই শেষ হয়। সেটা উঠে এসেছে মিলনের গলা ধরে যাওয়া কথায়। বলেছেন, ‘তবুও আল্লাহর উপর ভরসা রেখে নিজেকে শক্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করতে রাখলাম। এরপর কখন যে দেখা করার নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে বুঝতে পারিনি, দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির ডাকে বুঝলাম, আবিরকে রেখে বাইরে বেরুতে হবে।’ আইসিইউ থেকে বের হওয়ার সময় সন্তানের জন্য দোয়া করতে ভুলেননি তিনি। বলেছেন, ‘আবার বুকের ধন সন্তানের হাতটি বেডে উপর রেখে আল্লাহর হেফাজতে রেখে ফিরে আসতে হলো বাইরে। আল্লাহ হেফাজত করুন-আমিন।’
বিডি/সি/এমকে