রাতে কুয়াশা আর ভোরের শিশির বলছে নাটোরের গুরুদাসপুরসহ চলনবিলের জনপদে শীত এসেছে। শীতে যেমন হরেক সবজির সমারোহ দেখা যায়, তেমনি বাড়িতে বাড়িতে চলে পিঠাপুলির আয়োজন। এ পিঠাপুলিকে অন্যন্য স্বাদে রুপান্তির করে খেজুর গাছের রসের পাটালি গুড়।
মজার
বিষয় হচ্ছে এ গুড় তৈরি হয় কেবল শীতকালেই, পাওয়ায় যায় এ মৌসুমেই। তাই খেজুরের রসের গুড়
তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের গাছিরা।
গাছিরা জানান, উপযোগী খেজুর গাছের ডাল পালা প্রথমে পরিস্কার করা হয়। এরপর গাছের নির্দিষ্ট জায়গায় বেশ ক’দিন ছেঁটে ছেঁটে রস আসা শুরু হলে দৈনিক কেটে কেটে মাটির পাত্রের সাহায্যে রস সংগ্রহ করা হয়। ভোরে প্রতিটি গাছ থেকে সংগ্রহ করা রসগুলো বিশেষ কড়াইয়ে জ্বাল করা হয়। জ্বালানো রস অনেকটা আঠালো পর্যায়ে পৌছালে কড়াই থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করা হয়। এরপর সহনীয় গরম গুড় মাটির বিশেষ পাত্রের উপর পলিথিন বিছিয়ে সেখানে রাখা হয়। জমাট বাধা পর্যন্ত অপেক্ষা করে নামিয়ে নিলেই বিক্রি উপযোগী গুড় পাওয়া যায়।
গুরুদাসপুর পৌর শহরের আনন্দ নগর মহল্লার গাছি শফিকুল ইসলাম বলেন, এ মৌসুমে তিনি ২০টি খেজুর গাছ ইজারা নিয়েছেন। প্রতিটি গাছের বিপরীতে মালিককে ২ কেজি করে গুড় দিতে হচ্ছে। ২০টি গাছ থেকে দৈনিক ৮ কেজি পাটালীগুড় তৈরী হচ্ছে। প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়
তিনি আরও জানান, দৈনিক ১ হাজার ৪৪০ টাকার গুড় বিক্রি করেন তিনি। এর মধ্যে খরচ বাবদ ২শ টাকা বাদ দিলে নিট আয় ১ হাজার ২৪০ টাকা। শীত মৌসুমে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন তিনি।
গাছি শাহাবুদ্দীন, রাহেন গাইনসহ ন্তত ১০ জন গাছি জানান, খেজুরগুড় উৎপাদন এবং বিপণনে কোনো সরকারি সহায়তা পান না তারা। তবে অধিক লাভ করতে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চিনি মিশিয়ে খেজুরের গুড় তৈরি ও বিক্রি করেছেন। এতে খাটি গুড়ের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। ভোক্তা প্রতারিত হচ্ছেন। এ ব্যাবসায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি তাদের।
বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারি কলেজের কৃষি শিক্ষা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জহুরুল ইসলাম বলেন, ভোজনরসিক মানুষের কাছে খেজুরের রস এবং গুড়ের খ্যাতি রয়েছে। তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে চাহিদা পূরণে খেজুরের গাছ রোপনের সরকারি উদ্যোগ দেখা না গেলেও নির্বিচারে কেটে সাবাড় করা হচ্ছে।
পরিবেশবাদী ও সংগঠক এ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম সোহেল বলেন,বাণিজ্যিকভাবে খেজুরের গাছ রোপনের উদ্যোগ নেই। প্রাকৃতিকভাবে অযত্ন অবহেলায় বেড়ে উঠা এ গাছ সুস্বাদু খেজুরের গুড়ের চাহিদা পূরণ করে। শুধু রস আর গুড়েই শেষ নয়। খেজুর গাছের পাতা এবং কাঠের রয়েছে নানাবিধ ব্যবহার।
চলতি মৌসুমে গুরুদাসপুরে ১ হাজার ৩২২ মেট্রিক টন খেজুরগুড় উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কৃষি অফিস। এ গুড়ের বাজার দর ২০ কোটি টাকার বেশি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের দেওয়া তথ্যমতে- গুরুদাসপুরে রস দেওয়ার মতো উপযোগী গাছের রয়েছে ৭৫ হাজার ৯৪০টি। ৭৫ দিন খেজুর রস সংগ্রহের জন্য ধরা হয়। রস সংগ্রহের উপযোগী প্রতিটি গাছের রস থেকে গুড় উৎপাদন হয় গড়ে ১৭ দশমিক ৪০ কেজি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশীদ বলেন, খেজুর গুড়ের উৎপাদন এবং বিপননের বিষয়ে তারা গাছিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। ভেজাল গুড় উৎপাদন এবং বিপননের বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিডি/সি/এমকে