মহান বিজয় দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ ডিসেম্বর ২০২৩

আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এ দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যূদয় ঘটে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের। ২৪ বছরের নাগ পাশ ছিন্ন করে বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়।

এবার বিজয়ের ৫২ বছর পূর্তি উদযাপন করছে জাতি। দিনটি সাধারণ ছুটি। দিবসটি উদযাপনে জাতীয়ভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে আলাদাভাবে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হন পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে। সম্ভ্রম  হারান দুলাখ মা-বোন। ইতিহাসের এ বড় আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিশ্বের বুকে আত্মপ্রকাশ করে লাল-সবুজের পতাকা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে কুলিয়ে উঠতে না পেরে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে ঢাকায় তৎকালীন রেডকোর্স ময়দানে পাকসেনারা আত্মসমর্পণ করে। তার আগে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এদিকে দিবসের জাতীয় কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তববক অর্পণ। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ। বাংলাদেশে অবস্থনরত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সবাই মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি অগ্রগতি কামনায় বিশেষ দোয়া উপাসনা হবে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু বিকাশ কেন্দ্রসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সব শিশুপার্ক জাদুঘরে বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে।

ইতিহাস বলছে, বাঙালির মুক্তির স্বপ্নের প্রথম চাষ শুর হয় ১৯৫২ সালে। ৫২- একুশে ফেব্রুয়ারি ফাগুণের আগুনে ভাষা আন্দোলনের দাবি আর উন্মাতাল গণমানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত একাকার হয়। এদিনে ভাষার জন্য প্রথম বলীদান অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করে বিশ্ববাসী। সেই থেকে শুরু বাঙালির শেকল ভাঙার লড়াই। এরপর বাষট্টি, ঊনসত্তর এবং সত্তর- সৃষ্টি হয় একেকটা ইতিহাস। একাত্তরের ৭ মার্চ বিশাল জনসমুদ্র থেকে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠ ঘোষণা দেনএবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি তখন আরো দেব, তবুও এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।তাঁর এ ভাষণে দিক-নির্দেশনা পেয়ে যায় বাঙালি। চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকে তারা। এ ভাষণে কাপন ধরায় পাকিস্তানে। নীলনকশা আঁটে ইয়াহিয়া খান পুরো জাতিকে স্তব্ধ করতে মারণাস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চ ঘুমন্ত নিরীহ জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকসেনারা। শুরু হয় বাঙালি নিধন যজ্ঞ। এ অবস্থায় মুক্তি পাগল বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার রক্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনবে বলে অস্ত্র কাঁধে তুলে নেয়। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হয় লড়াইয়ে। লক্ষ্য স্থির রেখে শত্রু হননে দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় বীর বাঙালি। ওদিকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট হয়ে উঠে। অবশেষে ৯ মাসের রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয় ১৬ ডিসেম্বর। বাঙালি জাতির জীবনে আসে নতুন প্রভাত। বাঙালি জাতি অর্জন করে নিজেদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার। তথ্য সহায়তা- বাসস

 

বিডি/এন/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর