স্বামীর হাতেই খুন হন শিমু

১৯ জানুয়ারী ২০২২

 

চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের পর হত্যার রহস্য সামনে এসেছে। দাম্পত্য কলহের জেরে গ্রীন রোডের নিজ বাসায় তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল।

 

অভিনেত্রীর গলায় দাগ পাওয়া গেছে। রশি অথবা ওই জাতীয় কিছু গলায় পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। এ ছাড়া তার দুই চোয়াল, ঘাড়সহ তিন স্থানে নখের আঁচড়সহ আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে ফরেনসিক বিভাগ।

 

এদিকে নিহত শিমুর পরিবারের অভিযোগ স্বামী নোবেল মাদকাসক্ত হওয়ায় তাকে বিভিন্ন সময় শারীরিক নির্যাতন করতেন। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে নোবেল ও তার এক বন্ধুকে গ্রেপ্তার করেছে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। গত সোমবার সকালে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়ায় একটি ব্রিজের পাশের ঝোপঝাড় থেকে বস্তাবস্তি অবস্থায় শিমুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

 

নিহতের বড় ভাই এস আই খোকন বোনের মৃতদেহ শনাক্ত করেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অভিনেত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে রোববার রাতে শিমুর স্বামী রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

 

ডায়েরিতে উল্লেখ করেন, তার স্ত্রী শিমু রোববার সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে কাউকে কিছু না বলে চলে যায়। এরপর আর বাসায় ফেরত আসেননি।

 

সাধারণ ডায়েরিতে শাখাওয়াত নোবেলের পেশা হিসেবে বলা হয় বর্তমানে তিনি বেকার জীবনযাপন করছেন। এর আগে বাংলামোটরে তার মোটরপার্টসের দোকান ছিল।

 

স্বামী ও দুই ছেলে-মেয়ে রাজধানীর গ্রীন রোডের ৩৪ গ্রীন রোড, ফ্ল্যাট নাম্বার ২০১ তৃতীয় তলায় থাকতেন এ দম্পতি। এ বাসার নিজ ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। হত্যা শেষে লাশ ফ্ল্যাটের কক্ষে লুকিয়ে রেখে লাশের কাছাকাছি কয়েক ঘণ্টা তিনি অবস্থান করেছেন।

 

বস্তাবন্দি লাশ খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত শিমুর স্বামী গ্রীন রোডের বাসায় একদম স্বাভাবিক ছিলেন। রহস্যজনক কারণে সোমবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত তাদের ভবনের সিসি টিভি ভিডিও ক্যামেরা বন্ধ ছিল। এ ছাড়া এ দুই ঘণ্টা সময় শিমুর স্বামী তাদের গ্রীন রোডের বাসায় ছিলেন না। হত্যা শেষে লাশ গুম করতে তিনি বিভিন্ন ছক কষেন। সেই ছকের অংশ হিসেবে বাল্যবন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদকে ডেকে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেট গাড়ির ব্যাগডালায় পাটের তৈরি বস্তায় ভরে লাশটি নিয়ে সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে তারা বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন। কেরানীগঞ্জ থানাধীন কলাতিয়ার হজরতপুর ইউনিয়নের আলীপুর ব্রিজের উত্তর পাশে লাশটি ফেলে আসেন। এ সময় লাশের পরনে নীল রংয়ের কামিজ ও সাদা রংয়ের পাজামা ছিল।

 

এ ঘটনার পর শিমুর স্বামী একাধিক গণমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকারে বলেন, তার স্ত্রী দুইদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। মাওয়ায় শুটিং রয়েছে বলে বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে যান।

 

পুলিশ ইতোমধ্যে লাশ বহনকারী গাড়িটি জব্দ করেছে। গাড়ির পেছনের ডালায় রক্তের দাগ পাওয়া গেছে। লাশ পাওয়ার পরপরই নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদকে সাথে নিয়ে মঙ্গলবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দিনভর অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করেন।

 

শিমুর বড় ভাই হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ থানায় নোবেল, তার বন্ধু ফরহাদকে প্রধান ও অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।

 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ব্যক্তিগত জীবনে শিমু-নোবেল দম্পতির সংসারে দুটি ছেলেমেয়ে রয়েছে। চার ভাই-বোনের মধ্যে শিমু তৃতীয়। শিমুর স্বামী দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত ছিলেন। এ ছাড়া তার নিজের কোনো উপার্জন ছিল না। পারিবারিক কলহের জেরে বিভিন্ন সময় তিনি শিমুকে শারীরিক নির্যাতন করতেন। এর আগেও একাধিকবার তিনি শিমুর গায়ে হাত তুলেছেন।

 

পরবর্তীতে নিজেরাই মীমাংসা করে নিয়েছেন। শিমুর বড় ভাই হারুন বলেন, আমার বোনকে এভাবে মেরে ফেলবে আমরা কখনো চিন্তা করতে পারিনি। কি এমন দোষ করেছিল শিমু তাকে প্রাণেই মেরে ফেললো। সমস্যা হলে আমাদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করতে পারতেন। খুনির দৃষ্টান্তমূলক ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন তিনি।

 

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার শাহাবুদ্দিন কবীর জানান, শনিবার শেষ রাতে হত্যা শেষে লাশ নিয়ে সারাদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। রোববার রাতে কেরানিগঞ্জে ফেলে দিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন শিমুর স্বামী।

 

মিটফোর্ড হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, প্রাথমিকভাবে চিত্রনায়িকা রাহিমা ইসলাম শিমুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এদিন দুপুরে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় শিমুর। এ সময় তার গলায় আঘাতের দাগ পাওয়া গেছে। রশি অথবা ওই জাতীয় কিছু গলায় পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

 

স্বামী নোবেল ও নোবেলের বন্ধু আব্দুল্লাহ ফরহাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার শুনানি শেষে সন্ধ্যায় ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এ রিমান্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

 

আরআই


মন্তব্য
জেলার খবর