সাম্প্রতিক সারা দেশে যে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ট্রেন, রেলপথ। গত ৫১ দিনে রেলে এমন ঘটনা ঘটেছে পাঁচটি। এতে ৭ কোচ পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে সাত কোচ। নিহত হয়েছেন পাঁচ জন, আহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এমন পরিস্থিতিতে রেলযাত্রা ঝুকিঁপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এদিকে রেলপথে নাশকতা এড়াতে আনসার নিযুক্ত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ২৭০০ রেল পুলিশ চেয়েছে রেলবিভাগ। রেল নিরাপদ রাখতে রেললাইন চেক করা বাড়ানো হয়েছে। নাশকতার ঘটনায় ইতোমধ্যে কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে হরতাল-অবরোধ ডেকে আসছে সরকারবিরোধী বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। দফায় দফায় ডাকা এ হরতাল-অবরোধ শুরুর আগের রাতে, হরতাল-অবরোধ চলাকালে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা ঘটছে। গত ২৮ অক্টোবর পরবর্তী সময়ে প্রায় নিয়মিত প্রতি সপ্তাহেই চার দিন হরতাল-অবরোধ ডাকা হয়েছে।
এদিকে রেলপথে সর্বশেষ নাশকতার ঘটনা ঘটে ১৯ ডিসেম্বর ভোরে। ঢাকায় তেজগাঁও রেলস্টেশনে চলন্ত ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে চারজন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে নিজের শিশু সন্তানসহ এক নারী রয়েছে। এ ঘটনায় ট্রেনের তিনটি কোচ একেবারের পুড়ে যায়।
ঘটনার পর সাংবাদিকদের সামনে আসেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে গান পাউডার নিয়ে যাত্রীবেশে ট্রেনে উঠেছিল দুস্কৃতকারীরা। সুযোগ বুঝে আগুন লাগিয়ে দেয় তারা।
মন্ত্রী সুজন বলেন- রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে ট্রেনে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। রেল লাইন উপড়ে ফেলা, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, কোনো গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতি হতে পারে না। রেলের নিরাপত্তায় সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন রেলপথমন্ত্রী।
রেল মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, রেলে নাশকতা-সহিসংসতা শুরু হয় গত ১৬ নভেম্বর। টাঙ্গাইলে দাঁড়ানো অবস্থায় কমিউটার ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। এতে ট্রেনের দু’টি কোচ পুড়ে যায়, একটি কোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ১৯ নভেম্বর জামালপুরের সরিষাবাড়িতে দাঁড়ানো অবস্থায় যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে দু’টি কোচ পুড়ে যায়। তৃতীয় নাশকতার ঘটনাটি ঘটে ২২ নভেম্বর, সিলেটেও দাঁড়িয়ে থাকা উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। এতে আরেকটি কোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৩ ডিসেম্বরের নাশকতার ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়, এদিনে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে ২০ ফুট রেল ট্রাক কেটে ফেলা হয়। এতে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ট্রেনের সাতটি বগি ছিটকে যায়, ট্রেনের একযাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এলএম এএলএমসহ কয়েকজন আহত হন। একটি লোকোমোটিভ ও ছয়টি কোচ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপরের ঘটনাটি ঘটে ১৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকায়।
বিডি/এন/এমকে