দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল, ১৫ বছরে এ অর্থ লুটপাট হয়। লোপাট করা অর্থ জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ এবং জিপিডির ১.৮ শতাংশ। জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ, অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণসহ নানা ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে এ অর্থ লোপাট হয়েছে।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। ঢাকায় ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে এ ব্রিফিং হয়।
ব্রিফিংয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিশাল এ অর্থ দিয়ে কী হতে পারে, সেটা আপনারা হিসাব করতে পারেন। আমাদের রাজস্ব ঘাটতি কত? সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কত ব্যয় হচ্ছে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে কত ব্যয় করছি হিসাব করতে পারেন। এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে আমরা কী করতে পারতাম।
তিনি জানান, বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকে যে কেলেঙ্কারি বা অনিয়ম হয়, সেগুলো অফিসিয়াল সূত্রে পাওয়া যায় না। সংবাদ মাধ্যমে আসে। এগুলোকে কম্পাইল করে গত ১৫ বছরে গণমাধ্যমে ২৪টি ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এসব ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এ পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে, অপচয় হচ্ছে; ব্যাংকের টাকা সেটা জনগণের, সেটা কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তা চিন্তার বিষয়। এ টাকা কোথায় গেলো এটার তথ্যটা আমাদের জানা নেই। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকিং খাতে নিয়ম-কানুন বাস্তবায়ন ও সংস্কার করা একেবারেই জরুরি হয়ে পড়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেমও সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা অনেকদিন ধরেই চলেছে। ঋণ খেলাপি বিবেচনায় নিলে ২০০৮ সালে ঋণ খেলাপি ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। সেটা এখন এসে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায়। আর্থিক সংকট মোকাবিলায় সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ না করলে সংকট কাটবে না বলেও মনে করেন তিনি।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বর্তমানে দেশের অর্থনীতি অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এটা কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা নীতি নির্ধারকদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত।
বিফ্রিংয়ে বলা হয়, নিয়ম কানুনের অভাব নেই; নীতিমালাও আছে। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন; পরিদর্শন, পরীবিক্ষণ হয় না। ঋণ খেলাপির সঙ্গে জড়িতরাই নিয়ম করে দেন, ঋণ রিশিডিউল করা যাবে। এ রকম বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও নীতিমালার বাস্তবায়ন দরকার।
বিডি/ই/এমকে